পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
দেবদাস

 দারোগাবাবু সহাস্যে কহিলেন, পাগল আর কি!

 ব্রাহ্মণের মৃতদেহ হইলেও, পাড়াগাঁয়ে কেহ স্পর্শ করিতে চাহিল না; কাজেই চণ্ডাল আসিয়া বাঁধিয়া লইয়া গেল। তার পর কোন শুষ্ক পুষ্করিণীর তটে অর্ধদগ্ধ করিয়া ফেলিয়া দিল—কাক-শকুন উপরে আসিয়া বসিল, শৃগাল- কুক্কুর শবদেহ লইয়া কলহ করিতে প্রবৃত্ত হইল। তবুও যে শুনিল, সেই কহিল, আহা! দাসী-চাকরও বলাবলি করিতে লাগিল, আহা ভদ্দরলোক, বড়লোক! দু'শ' টাকা দামের শাল, দেড় শ' টাকা দামের আংটি! সে-সব এখন দারোগার জিম্মায় আছে; পত্র দু'খানাও তিনি রাখিয়াছেন।


 খবরটা সকালেই পার্ব্বতীর কানে গিয়াছিল বটে, কিন্তু কোন বিষয়েই আজকাল সে মনোনিবেশ করিতে পারিত না বলিয়া ব্যাপারটা ঠিক বুঝিতে পারে নাই। কিন্তু সকলের মুখেই যখন ঐ কথা, তখন পার্ব্বতীও বিশেষ করিয়া শুনিতে পাইয়া সন্ধ্যার পূর্বে একজন দাসীকে ডাকিয়া কহিল, কি হয়েচে লা? কে মরেচে?

 দাসী কহিল,আহা, কেউ তা জানে না মা! পূর্বজন্মের মাটি কেনা ছিল, তাই মরতে এসেছিল। শীতে হিমে সেই রাত্রি থেকে পড়ে ছিল, আর বেলা ন'টার সময় মরেচে।

 পার্ব্বতী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আহা, কে তা কিছু জানা গেল না?

 দাসী বলিল, মহেনবাবু সব জানেন, আমি অত জানিনে মা।

 মহেন্দ্রকে ডাকিয়া আনা হইলে সে কহিল, তোমাদের দেশের দেবদাস মুখুয্যে।

 পার্ব্বতী মহেন্দ্রর অত্যন্ত নিকটে সরিয়া আসিয়া, তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কে, দেবদাদা? কেমন করে জানলে?

 পকেটে দু'খানা চিঠি ছিল; একখানা দ্বিজদাস মুখুয্যে লিখেচেন—

 পার্ব্বতী বাধা দিয়া কহিল, হাঁ, তাঁর বড়দাদা।

 আর একখানা কাশীর হরিমতী দেবী লিখেচেন—