পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবদাস
২৩

 আবার গ্রীষ্মের ছুটি হইল। পূর্ব বৎসর গ্রীষ্মাবকাশে দেবদাস বিদেশ বেড়াইতে গিয়াছিল, বাটী যায় নাই। এবার পিতা-মাতা উভয়েই জিদ করিয়া পত্র লিখিয়াছেন, তাই ইচ্ছা না থাকিলেও দেবদাস বিছানাপত্র বাঁধিয়া তালসোনাপুর গ্রামের জন্য হাওড়া স্টেশনে আসিয়া উপস্থিত হইল। যেদিন বাটী আসিল, সেদিন তাহার শরীর তেমন ভাল ছিল না, তাই বাহির হইতে পারিল না। পরদিন পার্ব্বতীদের বাটীতে আসিয়া ডাকিল, খুড়ীমা!

 পার্ব্বতীর জননী আদর করিয়া ডাকিলেন, এস বাবা, বস।

 খুড়ীমার সহিত কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর দেবদাস জিজ্ঞাসা করিল, পারু কোথায় খুড়ীমা?

 ঐ বুঝি ওপরের ঘরে আছে।

 দেবদাস উপরে আসিয়া দেখিল, পার্ব্বতী সন্ধ্যাদীপ জ্বালিতেছে; ডাকিল, পারু!

 প্রথমে পার্ব্বতী চমকিত হইয়া উঠিল, তারপর প্রণাম করিয়া সরিয়া দাঁড়াইল।

 কি হচ্ছে পারু?

 সে-কথা আর বলিবার প্রয়োজন নাই—তাই পার্ব্বতী চুপ করিয়া রহিল। তারপর, দেবদাসের লজ্জা করিতে লাগিল—কহিল, যাই, সন্ধ্যা হয়ে গেল। শরীরটা ভাল নয়।

 দেবদাস চলিয়া গেল।


পাঁচ

 পার্ব্বতী এই তের বছরে পা দিয়াছে—ঠাকুরমাতা এই কথা বলেন। এই বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য অকস্মাৎ যেন কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া কিশোরীর সর্বাঙ্গ ছাইয়া ফেলে। আত্মীয়-স্বজন হঠাৎ একদিন চমকিত হইয়া দেখিতে পান যে, তাঁহাদের ছোট মেয়েটি বড় হইয়াছে। তখন পাত্রস্থা করিবার জন্য বড় তাড়াহুড়া পড়িয়া যায়। চক্রবর্তী-বাড়িতে আজ কয়েক দিবস হইতেই সেই কথার আলোচনা হইতেছে। জননী বড় বিষণ্ণ; কথায় কথায় স্বামীকে শুনাইয়া