করিতে বাহিরে গিয়াছিলেন। এখন বিবাহের সমস্ত স্থির করিয়া ঘরে আসিয়াছেন। প্রায় কুড়ি-পঁচিশ ক্রোশ দূরে বর্ধমান জেলায় হাতীপোতা গ্রামের জমিদারই পাত্র। তাঁহার অবস্থা ভাল, বয়স চল্লিশের নীচেই—গত বৎসর স্ত্রীবিয়োগ হইয়াছে, তাই আবার বিবাহ করিবেন। সংবাদটা যে বাটীর সকলেরই চিত্তরঞ্জন করিয়াছিল, তাহা নহে, বরং দুঃখের কারণই হইয়াছিল; তবে একটা কথা এই যে, ভুবন চৌধুরীর নিকট হইতে সর্বরকমে প্রায় দু’তিন হাজার টাকা ঘরে আসিবে। তাই মেয়েরা চুপ করিয়া ছিলেন।
একদিন দুপুরবেলা দেবদাস আহারে বসিয়াছিল। মা কাছে বসিয়া কহিলেন, পারুর যে বিয়ে।
দেবদাস মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কবে?
এই মাসেই। কাল মেয়ে দেখে গেছে। বর নিজেই এসেছিল।
দেবদাস কিছু বিস্মিত হইল,—কৈ, আমি তো কিছু জানিনে মা!
তুমি আর কি করে জানবে? বর দোজবরে—বয়স হয়েচে; তবে বেশ টাকাকড়ি নাকি আছে, পারু সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে।
দেবদাস মুখ নিচু করিয়া আহার করিতে লাগিল। তাহার জননী পুনরায় কহিতে লাগিলেন, ওদের ইচ্ছা ছিল এই বাড়িতে বিয়ে দেয়।
দেবদাস মুখ তুলিল—তারপর?
জননী হাসিলেন—ছিঃ, তা কি হয়! একে বেচা-কেনা ছোটঘর, তাতে আবার ঘরের পাশে বিয়ে, ছি ছি—বলিয়া মা ওষ্ঠ কুঞ্চিত করিলেন। দেবদাস তাহা দেখিতে পাইল।
কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া মা পুনরায় কহিলেন, কর্তাকে আমি বলেছিলাম।
দেবদাস মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বাবা কি বললেন?
কি আর বলবেন! এতবড় বংশের মুখ হাসাতে পারবেন না,—তাই আমাকে শুনিয়ে দিলেন।
দেবদাস আর কথা কহিল না।
সেইদিন দ্বিপ্রহরে মনোরমা ও পার্ব্বতীতে কথোপকথন হইতেছিল। পার্ব্বতীর চোখে জল,—মনোরমা বোধ করি এইমাত্র মুছিয়াছে। মনোরমা কহিল,—তবে উপায় বোন?