এবার দেবদাস চোখ রগড়াইয়া উঠিয়া বসিল। পার্ব্বতীর মুখে আবরণ নাই, ঘরে দীপও উজ্জ্বলভাবে জ্বলিতেছে; সহজেই দেবদাস চিনিতে পারিল। কিন্তু প্রথমে যেন বিশ্বাস হইল না। তাহার পর কহিল, এ কি! পারু নাকি?
হাঁ, আমি।
দেবদাস ঘড়ির পানে চাহিয়া দেখিল। বিস্ময়ের উপর আরও বিস্ময় বাড়িল—কহিল, এত রাত্রে?
পার্ব্বতী উত্তর দিল না, মুখ নিচু করিয়া বসিয়া রহিল।
দেবদাস পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, এত রাত্রে কি একলা এসেচ নাকি?
পার্ব্বতী বলিল, হাঁ।
দেবদাস উদ্বেগে, আশঙ্কায় কণ্টকিত হইয়া কহিল, বল কি! পথে ভয় করেনি?
পার্ব্বতী মৃদু হাসিয়া কহিল, ভূতের ভয় আমার তেমন করে না।
ভূতের ভয় না করুক, কিন্তু মানুষের ভয় তো করে! কেন এসেচ?
পার্ব্বতী জবাব দিল না, কিন্তু মনে মনে কহিল, এ সময়ে আমার তাও বুঝি নেই।
বাড়ি ঢুকলে কি করে? কেউ দেখেনি তো?
দরোয়ান দেখেচে।
দেবদাস চক্ষু বিস্ফারিত করিল, দরোয়ান দেখেচে? আর কেউ?
উঠানে চাকরেরা শুয়ে আছে—তাদের মধ্যেও বোধ হয় কেউ দেখে থাকবে।
দেবদাস বিছানা হইতে লাফাইয়া উঠিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল। কেউ চিনতে পেরেচে কি? পার্ব্বতী কিছুমাত্র উৎকণ্ঠা প্রকাশ না করিয়া অত্যন্ত সহজভাবে বলিল, তারা সবাই আমাকে জানে, হয়ত-বা কেউ চিনে থাকবে।
বল কি? এমন কাজ কেন করলে পারু?
পার্ব্বতী মনে মনে কহিল, তা তুমি কেমন করে বুঝবে? কিন্তু কোন কথা কহিল না,—অধোবদনে বসিয়া রহিল।
এত রাত্রে! ছি-ছি! কাল মুখ দেখাবে কেমন করে?
মুখ নিচু করিয়াই পার্ব্বতী বলিল, আমার সে সাহস আছে।
কথা শুনিয়া দেবদাস রাগ করিল না, কিন্তু নিরতিশয় উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিল,