চুনিলাল যেন একটু বিদ্রূপ করিয়া কহিল, আমি ভাবতুম তোমাদের মতো ভাল ছেলেরা কখনো দুপুর রাত্রের মুখ দেখেনি—আমার আজ একটা নূতন শিক্ষা হল।
দেবদাস কথা কহিল না। চুনিলাল আপনার মনে তামাক খাইতে খাইতে কহিল, দেবদাস, বাড়ি থেকে ফিরে এসে পর্যন্ত যেন ভাল নেই। তোমার মনে যেন কি ক্লেশ আছে।
দেবদাস অন্যমনস্ক হইয়াছিল। জবাব দিল না।
মনটা ভাল নেই, না হে?
দেবদাস হঠাৎ বিছানার উপর উঠিয়া বসিল। ব্যগ্রভাবে তাহার মুখপানে চাহিয়া বলিল, আচ্ছা চুনিবাবু, তোমার মনে কি কোন ক্লেশ নেই?
চুনিলাল হাসিয়া উঠিল—কিছু না।
কখনও এ জীবনে ক্লেশ পাওনি?
এ কথা কেন?
আমার শুনতে বড় সাধ হয়।
তা হলে আর একদিন শুনো।
দেবদাস বলিল, আচ্ছা চুনি, তুমি সারারাত্রি কোথায় থাক?
চুনিলাল মৃদু হাসিয়া কহিল, তা কি তুমি জানো না?
জানি, কিন্তু ঠিক জানিনে।
চুনিলালের মুখ উৎসাহে উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। এসব আলোচনার মধ্যে আর কিছু না থাক, একটা চক্ষুলজ্জাও যে আছে, দীর্ঘ অভ্যাসের দোষে সে তাহাও বিস্মৃত হইয়াছিল। কৌতুক করিয়া চক্ষু মুদিয়া বলিল, দেবদাস, ভাল করে জানতে হলে কিন্তু ঠিক আমার মতো হওয়া চাই। কাল আমার সঙ্গে যাবে?
দেবদাস একবার ভাবিয়া দেখিল। তাহার পর কহিল, শুনি, সেখানে নাকি খুব আমোদ পাওয়া যায়। কোনো কষ্ট মনে থাকে না; এ কি সত্যি?
একেবারে খাঁটি সত্যি।
তা যদি হয়, তো আমাকে নিয়ে যেয়ো—আমি যাবো।
পরদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে চুনিলাল দেবদাসের ঘরে আসিয়া দেখিল, সে ব্যস্তভাবে জিনিসপত্র বাঁধিয়া গুছাইয়া সাজাইয়া লইতেছে। বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি হে, যাবে না?
দেবদাস কোনদিকে না চাহিয়া কহিল, হাঁ, যাবো বই কি।