দিন-দুই পরে যশোদা পিতার নিকট নিজে কহিল, বাবা, ওখানে চিঠি লিখে দাও—আমি এখন দু'মাস এখান থেকে যাব না।
ভুবনবাবু একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, কেন মা?
যশোদা লজ্জিতভাবে মৃদু হাসিয়া কহিল, আমার শরীরটা তেমন ভাল নেই—এখন দিনকতক ছোটমার কাছে থাকি!
আনন্দে বৃদ্ধের চক্ষু ফাটিয়া জল বাহির হইল। সন্ধ্যার সময় পার্ব্বতী ডাকিয়া কহিলেন, তুমি আমাকে লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েচ। বেঁচে থাকো, সুখে থাকো।
পার্ব্বতী কহিল, সে আবার কি?
কি, তা তোমাকে বোঝাতে পারিনে। নারায়ণ! কত লজ্জা, কত আত্মগ্লানি থেকে আজ আমাকে নিষ্কৃতি দিলে।
সন্ধ্যার আঁধারে পার্ব্বতী দেখিল না যে, তাহার স্বামীর দুই চক্ষু জলে ভরিয়া গিয়াছে। আর বিনোদলাল—সে ভুবনমোহনের কনিষ্ঠ পুত্র, পরীক্ষা দিয়া সে বাড়ি আসিয়া আর পড়িতেই গেল না।
এগার
তাহার পর দুই-তিনদিন দেবদাস মিছামিছি পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইল—অনেকটা পাগলের মতো। ধর্মদাস কি কহিতে গিয়াছিল, তাহাকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া ধমকাইয়া উঠিল। গতিক দেখিয়া চুনিলালও কথা কহিতে সাহস করিল না। ধর্মদাস কাঁদিয়া বলিল, চুনিবাবু, কেন এমন হল?
চুনিলাল বলিল, কি হয়েচে ধর্মদাস?
একজন অন্ধ আর একজন অন্ধকে পথের কথা জিজ্ঞাসা করিল। ভিতরের খবর দু'জনের কেহই জানে না। চোখ মুছিতে মুছিতে ধর্মদাস বলিল, চুনিবাবু, যেমন করে হোক দেব্তাকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিন। আর লেখাপড়া যদি করবে না, তো এখানে থেকে কি হবে?
কথাটা খুব সত্য। চুনিলাল চিন্তা করিতে লাগিল। চারি-পাঁচদিন পরে একদিন ঠিক তেমনি সন্ধ্যার সময় চুনিবাবু বাহির হইতেছিল—দেবদাস কোথা হইতে আসিয়া হাত ধরিল—চুনিবাবু, সেখানে যাচ্চ?
চুনিলাল কুণ্ঠিত হইয়া বলিতে গেল, হাঁ—না, বল তো আর যাইনে।