পার্ব্বতী মাথা নাড়িল।
চৌধুরীমশায় ভাল আছেন? ছেলেমেয়েরা সব ভাল?
সব ভাল। পার্ব্বতী একটিবার মুখপানে চাহিয়া দেখিল। কিন্তু একটিবার জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না, তিনি কেমন আছেন—কি করিতেছেন। এখন যে কোন প্রশ্নই খাটে না।
দেবদাস কহিল, এখন কিছুদিন আছ তো?
হ্যাঁ।
তবে আর কি—বলিয়া দেবদাস বাহিরে চলিয়া গেল।
শ্রাদ্ধ শেষ হইয়া গেছে। সে কথা বলিতে গেলে অনেক লিখিতে হয়, তাই তাহাতে প্রয়োজন নাই। শ্রাদ্ধের পরদিবস পার্ব্বতী ধর্ম্মদাসকে নিভৃতে ডাকিয়া তাহার হাতে একগাছা সোনার হার দিয়া কহিল, ধর্ম্ম, তোমার মেয়েকে পরতে দিয়ো—
ধর্ম্মদাস মুখপানে চাহিয়া আর্দ্র চক্ষু আরো আর্দ্র করিয়া বলিল, আহা, তোমাকে কতদিন দেখিনি; সব ভাল খবর তো দিদি?
সব ভাল। তোমার ছেলেমেয়ে ভাল আছে?
তা আছে পারু।
তুমি ভাল আছ?
এইবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ধর্ম্মদাস কহিল, কৈ আর ভাল! এইবার যেতে ইচ্ছে করে—কর্তা গেলেন। ধর্ম্মদাস শোকের আবেগে কত কি হয়ত কহিত, কিন্তু তাহাতে পার্ব্বতী বাধা দিল। এ-সব সংবাদ শুনিবার জন্য সে হার দেয় নাই।
পার্ব্বতী কহিয়া উঠিল, সে কি কথা ধর্ম্ম, তুমি গেলে দেবদাদাকে দেখবে কে?
ধর্ম্মদাস কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, যখন ছেলেমানুষটি ছিল, তখন দেখেচি। এখন না দেখতে হলেই বাঁচি, পারু।
পার্ব্বতী আরো নিকটে সরিয়া আসিয়া কহিল, ধর্ম্মদাস, একটি কথা সত্য বলবে?
কেন বলব না দিদি!
তবে সত্যি করে বল, দেবদা এখন কি করে?