দেবদাস কহিল, কাঁদছিস বুঝি? তবে আর বলা হল না।
পার্ব্বতী চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল, বল।
দেবদাস মুহূর্তে কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিল, পারু, তুই নাকি খুব পাকা গিন্নী হয়েচিস রে?
ভিতরে ভিতরে পার্ব্বতী চাপিয়া অধর দংশন করিল; মনে মনে বলিল, ছাই গৃহিণী! শিমুলফুল দেবসেবায় লাগে কি?
দেবদাস হাসিয়া উঠিল; হাসিয়া কহিল—বড় হাসি পায়! ছিলি তুই এতটুকু—কত বড় হলি। বড় বাড়ি, বড় জমিদারি, বড় বড় ছেলেমেয়ে—আর চৌধুরীমশাই, সবাই বড়—কি রে পারু!
চৌধুরীমশাই পার্ব্বতীর বড় আমোদের জিনিস; তাঁকে মনে হইলেই তাহার হাসি পাইত। এত কষ্টেও তাই তার হাসি আসিল।
দেবদাস কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সহিত কহিল, একটা উপকার করতে পারিস?
পার্ব্বতী মুখ তুলিয়া কহিল, কি?
তোদের দেশে ভাল মেয়ে পাওয়া যায়?
পার্ব্বতী ঢোক গিলিয়া, কাশিয়া বলিল—ভাল মেয়ে? কি করবে?
পেলে বিয়ে করি। একবার সংসারী হতে সাধ হয়।
পার্ব্বতী ভালমানুষটির মতো কহিল, খুব সুন্দরী তো?
হাঁ, তোর মতো।
আর খুব ভালমানুষ?
না, খুব ভালমানুষে কাজ নেই—বরং একটু দুষ্টু,—তোর মতো আমার সঙ্গে যে ঝগড়া করতে পারবে।
পার্ব্বতী মনে মনে কহিল, সে তো কেউ পারবে না দেবদাদা; কেননা তাতে আমার মতো ভালবাসতে পারা চাই। মুখে কহিল, পোড়ার মুখ আমার, আমার মতো কত হাজার তোমার পায়ে আসতে পেলে ধন্য হয়।
দেবদাস কৌতুক করিয়া হাসিয়া বলিল, একটি আপাততঃ দিতে পারিস দিদি?
দেবদাদা, সত্যি বিয়ে করবে?
এই যে বললাম।