পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবদাস

 তাহার পর শ্বেতমূর্ত্তি ভোলানাথ চুন ঠেলিয়া উঠিয়া দাড়াইল। পণ্ডিতমহাশয় আবার চীৎকার করিলেন, গুয়োটা তুই।—তুই ওর ভেতর।

 অ্যাঁ—অ্যাঁ—অ্যাঁ—

 আবার!-

 দেবা শালা-ঠেলে-অ্যাঁ-অ্যাঁ-মণকষা-

 আবার গুঁয়োটা!

 কিন্তু পরক্ষণেই সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়া লইয়া, মাদুরের উপব উপবেশন করিয়া প্রশ্ন করিলেন, দেবা ঠেলে ফেলে দিয়ে পালিয়েছে?

 ভুলো আরো কাঁদিতে লাগিল—অ্যাঁ—অ্যাঁ—অ্যাঁ—

 তাহার পর অনেকক্ষণ ধরিয়া চুন ঝাড়াঝাড়ি হইল, কিন্তু সাদা এবং কালো রঙে সর্দার-পোড়োকে কতকটা ভূতের মতো দেখাইতে লাগিল এবং তখনও তাহার ক্রন্দনের নিবৃত্তি হইল না।

 পণ্ডিত বলিলেন, দেবা ঠেলে ফেলে পালিয়েচে? বটে?

 ভুলো বলিল—অ্যাঁ—অ্যাঁ—

 পণ্ডিত বলিলেন, এর শোধ নেব।

 ভুলো কহিল,—অ্যাঁ—অ্যাঁ—অ্যাঁ—

 পণ্ডিত প্রশ্ন করিলেন, ছোঁড়াটা কোথায়—

 তাহার পর ছেলেদের দল রক্তমুখে হাঁপাইতে হাঁপাইতে ফিরিয়া আসিয়া জানাইল, দেবাকে ধরা গেল না। উঃ—যে ইঁট ছোঁড়ে—!

 ধরা গেল না?

 আর একজন বালক পূর্বকথার প্রতিধ্বনি করিল—উঃ—যে—

 থাম বেটা—

 সে ঢোক গিলিয়া একপাশে সরিয়া গেল। নিষ্ফল-ক্রোধে পণ্ডিতমশাই প্রথমে পার্ব্বতীকে খুব ধমকাইয়া উঠিলেন; তাহার পর ভোলানাথের হাত ধরিয়া কহিলেন, চল্‌, একবার কাছারিবাড়িতে কর্তাকে বলে আসি।

 ইহার অর্থ এই যে, জমিদার নারায়ণ মুখুয্যের নিকট তাঁহার পুত্রের আচরণের নালিশ করিবেন।

 তখন বেলা তিনটা আন্দাজ হইয়াছিল। নারায়ণ মুখুয্যেমশায় বাহিরে বসিয়া গড়গড়ায় তামাক খাইতেছিলেন এবং একজন ভৃত্য হাত-পাখা লইয়া