দেবদা, আমি যে মরে যাচ্ছি। কখনো তোমার সেবা করতে পেলাম না—আমার যে আজন্মের সাধ—
অন্ধকারে চোখ মুছিয়া দেবদাস কহিল—তারও তো সময় আছে।
তবে আমার কাছে চল; এখানে তোমাকে দেখবার যে কেউ নেই!
তোর বাড়ি গেলে খুব যত্ন করবি?
আমার ছেলেবেলার সাধ! স্বর্গের ঠাকুর! আমার এ সাধটি পূর্ণ করে দাও! তারপর মরি—তাতেও দুঃখ নেই।
এবার দেবদাসের চোখেও জল আসিয়া পড়িল।
পার্ব্বতী পুনরায় কহিল, দেবদা, আমার বাড়ি চল।
দেবদাস চোখ মুছিয়া বলিল, আচ্ছা যাব।
আমাকে ছুঁয়ে বল, যাবে?
দেবদাস অনুমান করিয়া পার্ব্বতীর পদপ্রান্ত স্পর্শ করিয়া বলিল, এ কথা কখনও ভুলব না। আমাকে যত্ন করলে যদি—তোমার দুঃখ ঘোচে—আমি যাব। মরবার আগেও আমার এ কথা স্মরণ থাকবে।
তের
পিতার মৃত্যুর পর ছয় মাস ধরিয়া ক্রমাগত বাটীতে থাকিয়া, দেবদাস একেবারে জ্বালাতন হইয়া উঠিল। সুখ নাই, শান্তি নাই, একান্ত একঘেয়ে জীবন।তার উপর ক্রমাগত পার্ব্বতীর চিন্তা; আজকাল সব কাজেই তাহাকে মনে পড়ে। আর, ভাই দ্বিজদাস এবং পতিব্রতা ভ্রাতৃজায়া দেবদাসের জ্বালা আরও বাড়াইয়া তুলিলেন।
গৃহিণীর অবস্থাও দেবদাসের ন্যায়। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সমস্ত সুখই ফুরাইয়া গিয়াছে। পরাধীনভাবে এ বাড়ি তাঁহার ক্রমে অসহ্য হইয়া উঠিতেছে। আজ কয়দিন হইতে তিনি কাশীবাসের সঙ্কল্প করিতেছেন; শুধু দেবদাসের বিবাহ না দিয়া যাইতে পারিতেছেন না। বলিতেছেন—দেবদাস, একটি বিয়ে কর—আমি দেখে যাই।কিন্তু তাহা কিরূপে সম্ভব? একে অশৌচ অবস্থা, তার উপর আবার মনোমতো পাত্রীর সন্ধান করিতে হইবে। আজকাল তাই গৃহিণীর মাঝে মাঝে দুঃখ হয় যে, সে-সময় পার্ব্বতীর সহিত বিবাহ দিলেই বেশ