দেবদাস বুঝিয়া হাসিয়া কহিল, কৈ, সে-সকল তো দেখিনে?
থাকলে তো দেখবে! আমি তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
তাদের অপরাধ?
অপরাধ বেশী কিছু ছিল না, কিন্তু আমার ভাল লাগল না। দেবদাস বহুক্ষণ ধরিয়া ভাবিয়া বলিল, সেই পর্যন্ত আর কেউ এখানে আসেনি?
না। সেই পর্যন্ত কেন, তুমি যাবার পরদিন থেকেই এখানে কেউ আসে না। শুধু চুনি মাঝে মাঝে এসে বসত, কিন্তু মাস-দুই থেকে তাও বন্ধ।
দেবদাস বিছানার উপর শুইয়া পড়িল। অন্যমনস্কভাবে বহুক্ষণ মৌন থাকিয়া ধীরে কহিল, চন্দ্রমুখী, তবে দোকানপাট সব তুলে দিলে?
হাঁ—দেউলে হয়ে পড়েচি।
দেবদাস সে-কথার উত্তর না দিয়া বলিল, কিন্তু খাবে কি করে?
এই যে শুনলে কিছু গহনাপত্র ছিল, বিক্রি করেচি।
সে আর কত?
বেশী নয়। প্রায় আট-ন'শ টাকা আমার আছে। একজন মুদীর কাছে রেখে দিয়েচি—সে আমাকে মাসে কুড়ি টাকা দেয়।
কুড়ি টাকায় আগে তো তোমার চলত না?
না, আজও ভাল চলে না। তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকি, তাই মনে করচি, হাতের এই দু'গাছা বালা বিক্রি করে, সমস্ত পরিশোধ করে দিয়ে আর কোথাও চলে যাব।
কোথায় যাবে?
তা এখনো স্থির করিনি। কোন সস্তা মুলুকে যাব—কোন পাড়াগ্রামে—যেখানে কুড়ি টাকায় মাস চলে।
এতদিন যাওনি কেন? যদি সত্যই তোমার আর-কিছু প্রয়োজন নেই তো এতদিন মিথ্যা কেন ধার-কর্জ বাড়ালে?
চন্দ্রমুখী নতমুখে কিছুক্ষণ ভাবিয়া লইল। তাহার জীবনে এ কথাটা বলিতে আজ তাহার প্রথম লজ্জা করিল। দেবদাস বলিল, চুপ করলে যে?
চন্দ্রমুখী শয্যার একপ্রান্তে সঙ্কুচিতভাবে উপবেশন করিয়া ধীরে ধীরে কহিল—রাগ করো না; যাবার আগে আশা করেছিলাম, তোমার সঙ্গে দেখা হ'লে ভাল