পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
দেবদাস

 মহেন্দ্র আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, পালকি বেহারা আনিয়ে দিচ্চি, কিন্তু দুটো কেন মা?

 পার্ব্বতী কহিল, তুমি সঙ্গে যাবে বাবা। পথে যদি মরি, মুখে আগুন দেবার জন্য বড়ছেলেকে প্রয়োজন।

 মহেন্দ্র আর কিছু কহিল না। পালকি আসিলে দুইজনে প্রস্থান করিল।

 চৌধুরী মহাশয় শুনিতে পাইয়া ব্যস্ত হইয়া দাসদাসীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কেহই কিন্তু কারণ বলিতে পারিল না। তখন তিনি বুদ্ধি খরচ করিয়া আরও পাঁচ-ছ'জন দরোয়ান, দাসদাসী পাঠাইয়া দিলেন।

 একজন সিপাহী জিজ্ঞাসা করিল, পথে দেখা হলে পালকি ফিরিয়ে আনতে হবে কি?

 তিনি ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, না, তাতে কাজ নেই। তোমরা সঙ্গে যেয়ো—যেন কোন বিপদ-আপদ ঘটে না।

 সেইদিন সন্ধ্যার পর পালকি দুইটা তালসোনাপুরে পৌঁছিল, কিন্তু দেবদাস গ্রামে নাই। সেদিন দ্বিপ্রহরে কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছে।

 পার্ব্বতী কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, অদৃষ্ট! মনোরমার সহিত সাক্ষাৎ করিল।

 মনো বলিল, পারু কি দেবদাসকে দেখতে এসেছিলে?

 পার্ব্বতী বলিল, না, সঙ্গে করে নিয়ে যাবার জন্যে এসেছিলাম। এখানে তার আপনার লোক তো কেউ নেই।

 মনোরমা অবাক হইল। কহিল, বলিস কি? লজ্জা করত না?

 লজ্জা আবার কাকে? নিজের জিনিস নিজে নিয়ে যাব—তাতে লজ্জা কি?

 ছিঃ ছিঃ—ওকি কথা! একটা সম্পর্ক পর্যন্ত নেই—অমন কথা মুখে এনো না।

 পার্ব্বতী ম্লানহাসি হাসিয়া কহিল, মনোদিদি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত যে কথা বুকের মাঝে বাসা করে আছে, এক-আধবার তা মুখ দিয়ে বার হয়ে পড়ে। তুমি বোন তাই এ কথা শুনলে।

 পরদিন প্রাতঃকালে পার্ব্বতী পিতামাতার চরণে প্রণাম করিয়া পুনরায় পাল্কীতে উঠিল।