পাতা:দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
দেবদাস

চন্দ্রমুখী মৃদু হাসিয়া কহিল, মা, আমরা দুঃখী মানুষ, সব খাজনা তো দিতে পারিনে। শুনেচি, আপনার বড় দয়া; তাই আপনার কাছেই এসেচি, দয়া করে কিছু মাপ করে দেন।

 এরূপ কথা বড়বৌ জীবনে এই প্রথম শুনিলেন। তাঁর দয়া আছে, খাজনা মাপ করিতে পারেন—কাজেই চন্দ্রমুখী একেবারে প্রিয়পাত্রী হইয়া পড়িল। বড়বৌ কহিলেন, তা বাছা, দিনের মধ্যে এমন কত টাকা আমাকে ছেড়ে দিতে হয়, কত লোক আমাকে ধরে; আমি না বলিতে পারি না, এজন্য কর্তা আমার উপর কত রাগ করেন।—তা তোমার কত টাকা বাকি পড়েচে?

 বেশি নয় মা, মোটে দু'টাকা; কিন্তু আমাদের কাছে তাই যেন পাহাড়; সমস্ত দিন আজ পথ চ'লে এসেচি।

 বড়বৌ কহিলেন, আহা, তোমরা দুঃখী লোক, আমাদের দয়া করাই উচিত। ও বিন্দু একে বাইরে নিয়ে যা, দেওয়ানমশাইকে আমার নাম করে বলে দে, যেন দু'টাকা মাপ করা হয়। তা বাছা, তোমার বাড়ি কোথায়?

 চন্দ্রমুখী বলিল, আপনারই রাজত্বে—ওই অশথঝুরি গাঁয়ে। আচ্ছা মা, কর্তারা এখন দু'শরিক, না?

 বড়বৌ বলিলেন, পোড়া কপাল! ছোট শরিক আর কি আছে? দু'দিন পরে আমারই সব হবে।

 চন্দ্রমুখী উদ্বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কেন মা? ছোটবাবুর বুঝি ধার-কর্জ?

 বড়বৌ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, আমার কাছে সব বাঁধা। ঠাকুরপো একেবারে বয়ে গেছে! কলকাতায় মদ-বেশ্যা এই নিয়েই আছে। কত টাকা উড়িয়ে দিলে তার কি আদি-অন্ত আছে!

 চন্দ্রমুখীর মুখ শুকাইল, একটু থামিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হাঁ মা, ছোটবাবু কি তা হলে বাড়িও আসেন না?

 বড়বৌ বলিলেন, আসবে না কেন! যখন টাকার দরকার হয়, আসে। ধার করে, বিষয় দেয়—চলে যায়। এই মাস-দুই হল এসে বারো হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বাঁচবার আকারও নেই, গা-ময় কুচ্ছিত রোগ জন্মেচে—