ছিঃ—ছিঃ—
চন্দ্রমুখী শিহরিয়া উঠিল—মলিন-মুখে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কলকাতায় কোথায় থাকেন?
বড়বৌ কপালে একটা করাঘাত করিয়া হাসিমুখে কহিলেন, পোড়া দশা! তা কেউ কি জানে? কোথায় কোন্ হোটেলে খায়—যার-তার বাড়িতে পড়ে থাক—সেই জানে,—আর যম জানে।
চন্দ্রমুখী সহসা উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, আমি—যাই—
বড়বৌ একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, যাবে? ওরে ও বিন্দু—
চন্দ্রমুখী বাধা দিয়া বলিল, থাক্ মা, আমি আপনিই কাছারিতে যেতে পারব, বলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। বাটীর বাহির হইয়া দেখিল, ভৈরব অপেক্ষা করিয়া আছে—গো-শকট প্রস্তুত। সেই রাত্রে চন্দ্রমুখী বাটী ফিরিয়া আসিল। সকালবেলা ভৈরবকে আবার ডাকিয়া কহিল, ভৈরব, আমি আজ কলকাতায় যাব; তুমি তো যেতে পারবে না, তাই তোমার ছেলেকে সঙ্গে নেব, কি বল?
তোমার ইচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় কেন মা, বিশেষ কোন কাজ আছে কি?
হাঁ ভৈরব, বিশেষ কাজ আছে।
আবার কবে আসবে মা?
সে কথা বলতে পারিনে ভৈরব। হয়ত শীঘ্র ফিরে আসব, হয়ত বা দেরি হবে। আর যদি না আসি, এ-সব ঘরবাড়ি তোমার রইল।
প্রথমে ভৈরব অবাক হইয়া গেল। তাহার পর তাহার দু'চোখ জলে ভরিয়া গেল। কহিল, ও কি কথা মা! তুমি না এলে এ গাঁয়ের লোক যে কেউ বাঁচবে না।
চন্দ্রমুখী সজলচক্ষে মৃদু হাসিয়া বলিল, সেকি ভৈরব, আমি দু'বছর হল এখানে এসেচি। তার পূর্বে কি তোমরা বেঁচে ছিলে না?
ইহার উত্তর মূর্খ ভৈরব দিতে পারিল না, কিন্তু চন্দ্রমুখী অন্তরে সমস্তই বুঝিল। ভৈরবের ছেলে কেব্লা শুধু সঙ্গে যাইবে। গাড়িতে আবশ্যক দ্রব্যাদি বোঝাই করিয়া উঠিবার সময় পাড়ার মেয়ে-পুরুষ সবাই দেখিতে আসিল, দেখিয়া কাঁদিতে লাগিল। চন্দ্রমুখীর নিজের চোখেও জল ধরে না। ছাই কলিকাতা! দেবদাসের