পাতা:দেবী চৌধুরাণী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় খণ্ড—নবম পরিচ্ছেদ
৮৯

 সা। দেবী দেবী।

 ব্র। তোমার কে হয়?

 সা। ভগিনী।

 ব্র। কি রকম ভগিনী?

 সা। জ্ঞাতি।

 ব্রজেশ্বর আবার চুপ করিল। মাঝিদিগকে ডাকিয়া বলিল, “তোমরা বড় বজরার সঙ্গে যাইতে পার?” মাঝিরা বলিল, “সাধ্য কি! ও নক্ষত্রের মত ছুটিয়াছে।” ব্রজেশ্বর আবার চুপ করিল। সাগর ঘুমাইয়া পড়িল।

 প্রভাত হইল, ব্রজেশ্বর বজরা খুলিয়া চলিল।

 সূর্য্যোদয় হইলে, সাগর আসিয়া ব্রজেশ্বরের কাছে বসিল। ব্রজেশ্বর জিজ্ঞাসা করিল, “দেবী কি ডাকাতি করে?”

 সা। তোমার কি বোধ হয়?

 ব্র। ডাকাতির সমান ত সব দেখিলাম—ডাকাতি করিলে করিতে পারে, তাও দেখিলাম। তবু বিশ্বাস হয় না যে, ডাকাতি করে।

 সা। তবু কেন বিশ্বাস হয় না?

 এ। কে জানে। ডাকাতি না করিলেই বা এত ধন কোথায় পাইল?

 সা। কেহ বলে, দেবী দেবতার বরে এত ধন পাইয়াছে; কেহ বলে, মাটির ভিতর পোঁতা টাকা পাইয়াছে; কেহ বলে, দেবী সোণা করিতে জানে।

 ব্র। দেবী কি বলে?

 সা। দেবী বলে, এক কড়াও আমার নয়, সব পরের।

 ব্র। পরের ধন এত পাইল কোথায়?

 সা। তা কি জানি।

 ব্র। পরের ধন হ’লে অত আমিরি করে? পরে কিছু বলে না?

 সা। দেবী কিছু আমিরি করে না। খুদ খায়, মাটিতে শোয়, গড়া পরে। কাল যা দেখ্‌লে, সে সকল তোমার আমার জন্য মাত্র,—কেবল দোকানদারি। তোমার হাতে ও কি?

 সাগর ব্রজেশ্বরের আঙ্গুলে নূতন আঙ্গটি দেখিল।

 ব্রজেশ্বর বলিল, “কাল দেবীর নৌকায় জলযোগ করিয়াছিলাম বলিয়া, দেবী আমাকে এই আঙ্গটি মর্য্যাদা দিয়াছে।”