যখন রঙ্গরাজ এই কথা বলিল, তখন ভবানী ঠাকুর বর্কন্দাজ সৈন্য লইয়া চলিয়া যান নাই। যাইবার উদ্যোগ করিতেছেন। সাহেব বলিল, “এই হাজার বর্কন্দাজ সবাই ডাকাইত; কেন না, উহারা ডাকাইতের হইয়া সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করিতেছে।”
রঙ্গরাজ। উহারা যুদ্ধ করিবে না, চলিয়া যাইতেছে দেখুন।
সাহেব দেখিলেন, বর্কন্দাজ সৈন্য পলাইবার উদ্যোগ করিতেছে। সাহেব তর্জ্জন গর্জ্জন করিয়া বলিলেন, “কি। তোমরা শাদা নিশানের ভাণ করিয়া পলাইতেছ?”
রঙ্গরাজ। সাহেব, ধরিলে কবে যে পলাইলাম? এখনও কেহ পলায় নাই। পার, ধর। শাদা নিশান ফেলিয়া দিতেছি।
এই বলিয়া রঙ্গরাজ শাদা নিশান ফেলিয়া দিল। কিন্তু সিপাহীরা সাহেবের আজ্ঞা না পাইয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া রহিল।
সাহেব ভাবিতেছিলেন, “উহাদের পশ্চাদ্ধাবিত হওয়া বৃথা। পিছু ছুটিতে ছুটিতে উহারা নিবিড় জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিবে। একে রাত্রিকাল, তাহাতে মেঘাড়ম্বর, জঙ্গলে ঘোর অন্ধকার সন্দেহ নাই। আমার সিপাহীরা পথ চেনে না, বর্কন্দাজেরা পথ চেনে। সুতরাং তাহাদের ধরা সিপাহীর সাধ্য নহে।” কাজেই সাহেব সে অভিপ্রায় পরিত্যাগ করিলেন। বলিলেন, “যাক্, উহাদের চাই না। যে কথা হইতেছিল, তাই হৌক, তোমরা সকলে ধরা দিবে?”
রঙ্গ। এক জনও না। কেবল দেবী রাণী।
সাহেব। পীষ্! এখন আর লড়াই করিবে কে? এই যে কয় জন, তাহারা কি আর পাঁচ শ সিপাহীর সঙ্গে লড়াই করিতে পারিবে? তোমার বর্কন্দাজ সেনা ত জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিল, দেখিতেছি।
রঙ্গরাজ দেখিল, বাস্তবিক ভবানী ঠাকুরের সেনা জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিল।
রঙ্গরাজ বলিল, “আমি অত জানি না। আমায় আমাদের প্রভু যা বলিয়াছেন, তাহাই বলিতেছি। বজরা পাইবেন না, বজরায় যে ধন, তাহা পাইবেন না, আমাদের কাহাকেও পাইবেন না। কেবল দেবী রাণীকে পাইবেন।
সা। কেন?
রঙ্গ। তা জানি না।
সা। জান আর নাই জান, বজরা এখন আমার, আমি উহা দখল করিব।
রঙ্গ। সাহেব, বজরাতে উঠিও না, বজরা ছুঁইও না, বিপদ্ ঘটিবে।