পাতা:দেবী চৌধুরাণী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ
১২৫

 দেবী এই কথা বলিলে নিশিতে, দিবাতে, রঙ্গরাজে ও দেবীতে বড় গণ্ডগোল বাঁধিয়া গেল। নিশি বলে, “আমি দেবী,” দিবা বলে, “আমি দেবী,” রঙ্গরাজ নিশিকে বলে, “এই দেবী,” দেবী বলে, “আমি দেবী।” বড় গোলমাল।

 তখন লেফ্‌টেনাণ্ট্ সাহেব মনে করিলেন, এ ফেরেব্‌বাজির একটা চূড়ান্ত করা উচিত। বলিলেন, “তোমাদের দুই জনের মধ্যে এক জন দেবী চৌধুরাণী বটে। ওটা চাকরাণী, ওটা দেবী নহে। এই দুই জনের মধ্যে কে সে পাপিষ্ঠা, তাহা তোমরা চাতুরী করিয়া আমাকে জানিতে দিতেছ না। কিন্তু তাহাতে তোমাদের অভিপ্রায় সিদ্ধ হইবে না। আমি এখন দুই জনকেই ধরিয়া লইয়া যাইব। ইহার পর প্রমাণের দ্বারা যে দেবী চৌধুরাণী বলিয়া সাব্যস্ত হইবে, সেই ফাঁসি যাইবে। যদি প্রমাণের দ্বারা এ কথা পরিষ্কার না হয়, তবে দুই জনেই ফাঁসি যাইবে।”

 তখন নিশি ও দিবা দুই জনেই বলিল, “এত গোলযোগে কাজ কি? আপনার সঙ্গে কি গোইন্দা নাই? যদি গোইন্দা থাকে, তবে তাহাকে ডাকাইলেই ত সে বলিয়া দিতে পারিবে,—কে যথার্থ দেবী চৌধুরাণী।”

 হরবল্লভকে বজরায় আনিবে, দেবীর এই প্রধান উদ্দেশ্য। হরবল্লভের রক্ষার ব্যবস্থা না করিয়া, দেবী আত্মরক্ষার উপায় করিবে না, ইহা স্থির। তাঁহাকে বজরায় না আনিতে পারিলে হববল্লভের রক্ষার নিশ্চয়তা হয় না।

 সাহেব মনে করিলেন, “এ পরামর্শ মন্দ নহে।” তখন তাঁহার সঙ্গে যে সিপাহী আসিয়াছিল, তাহাকে বলিলেন, “গোইন্দাকে ডাক।” সিপাহী এক ছিপের এক জন জমাদ্দার সাহেবকে ডাকিয়া বলিল, “গোইন্দাকে ডাক।” তখন গোইন্দাকে ডাকাডাকির গোল পড়িয়া গেল। গোইন্দা কোথায়, গোইন্দা কে, তাহা কেহই জানে না, কেবল চারি দিকে ডাকাডাকি করে।

সপ্তম পরিচ্ছেদ

 বস্তুতঃ হরবল্লভ রায় মহাশয় যুদ্ধক্ষেত্রেই উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু সে ইচ্ছাপূর্ব্বক নহে, ঘটনাধীন। প্রথমে বড় ঘেঁসেন নাই। “শৃঙ্গিণাং শস্ত্রপাণীনাং” ইত্যাদি চাণক্যপ্রদত্ত সদুপদেশ স্মরণ করিয়া, তিনি সিপাহীদিগের ছিপে উঠেন নাই। একখানা পৃথক্‌ ডিঙ্গীতে থাকিয়া, লেফ্‌টেনাণ্ট সাহেবকে বজরা দেখাইয়া দিয়া, অর্দ্ধ ক্রোশ দূরে পলাইয়া