এ দিকে হরবল্লভ কামরার দিকে গেলেন। কামরার দ্বারে উপস্থিত হইয়া কামরার সজ্জা ও ঐশ্বর্য্য, দিবা ও নিশির রূপ ও সজ্জা দেখিয়া, তিনি বিস্মিত হইলেন। সাহেবকে সেলাম্ করিতে গিয়া, ভুলিয়া নিশিকে সেলাম্ করিয়া ফেলিলেন। হাসিয়া নিশি কহিল, “বন্দেগী খাঁ সাহেব! মেজাজ সরিফ্?”
শুনিয়া দিবা বলিল, “বন্দেগী খাঁ সাহেব! আমায় একটা কুর্ণিস হলো না—আমি হলেম এদের রাণী।”
সাহেব হরবল্লভকে বলিলেন, “ইহারা ফেরেব্ করিয়া দুই জনেই বলিতেছে, ‘আমি দেবী চৌধুরাণী।’ কে দেবী চৌধুরাণী, তাহার ঠিকানা না হওয়ায়, আমি তোমাকে ডাকিয়াছি। কে দেবী?”
হরবল্লভ বড় প্রমাদে পড়িলেন। ঊর্দ্ধ চতুর্দ্দশ পুরুষের ভিতর কখনও দেবীকে দেখেন নাই। কি করেন, ভাবিয়া চিন্তিয়া নিশিকে দেখাইয়া দিলেন। নিশি খিল্ খিল্ করিয়া হাসিয়া উঠিল। অপ্রতিভ হইয়া, ‘ভুল হইয়াছে’ বলিয়া হরবল্লভ দিবাকে দেখাইলেন। দিবা লহর তুলিয়া হাসিল। বিষণ্ণ মনে হরবল্লভ আবার নিশিকে দেখাইল। সাহেব তখন গরম হইয়া উঠিয়া, হরবল্লভকে বলিলেন, “টোম্ বড্জাট্—শূওর! তোম্ পছান্টে নেহি?”
তখন দিবা বলিল, “সাহেব, রাগ করিবেন না। উনি চেনেন না। উঁহার ছেলে চেনে। উঁহার ছেলে বজরার ছাদে বসিয়া আছে, তাহাকে আনুন—সে চিনিবে।”
হরবল্লভ আকাশ হইতে পড়িল, বলিল, “আমার ছেলে!”
দিবা। এইরূপ শুনি।
হর। ব্রজেশ্বর?
দিবা। তিনিই।
হর। কোথা?
দিবা। ছাদে।
হর। ব্রজ এখানে কেন?
দিবা। তিনি বলিবেন।
সাহেব হুকুম দিলেন, “তাহাকে আন।”
দিবা রঙ্গরাজকে ইঙ্গিত করিল। তখন রঙ্গরাজ ছাদে গিয়া ব্রজেশ্বরকে বলিল, ‘চল, দিবা ঠাকুরাণীর হুকুম।”