নিশি। (ভাবিতে ভাবিতে) তোমার দ্বারাও আমার একটা উপকার হইলে হইতে পারে—তা তোমার মত লোকের দ্বারা সে উপকার না হওয়াই ভাল।
হর। তোমার কাছে যোড়হাত করিতেছি—তোমার হাতে ধরিতেছি—
হরবল্লভ বিহ্বল—নিশি ঠাকুরাণীর বাঁউড়ী-পরা গোলগাল হাতখানি প্রায় ধরিয়া ফেলিয়াছিল আর কি! চতুরা নিশি আগে হাত সরাইয়া লইল—বলিল, “সাবধান! ও হাত শ্রীকৃষ্ণের গৃহীত। কিন্তু তোমার হাতে পায়ে ধরিয়া কাজ নাই—তুমি যদি এতই কাতর হইয়াছ, তবে তুমি যাতে রক্ষা পাও, আমি তা করিতে রাজি হইতেছি। কিন্তু তোমায় যা বলিব, তা যে তুমি করিবে, এ বিশ্বাস হয় না। তুমি জুয়াচোর, কৃতঘ্ন, পামর, গোইন্দাগিরি কর—তোমার কথায় বিশ্বাস কি?”
হর। যে দিব্য বল, সেই দিব্য করিতেছি।
নিশি। তোমার আবার দিব্য? কি দিব্য করিবে?
হর। গঙ্গাজল তামা তুলসী দাও—আমি স্পর্শ করিয়া দিব্য করিতেছি।
নিশি। ব্রজেশ্বরের মাথায় হাত দিয়া দিব্য করিতে পার?
হরবল্লভ গর্জ্জিয়া উঠিল। বলিল, “তোমাদের যা ইচ্ছা, তাহা কর। আমি তা পারিব না।”
কিন্তু এ তেজ ক্ষণিকমাত্র। হরবল্লভ আবার তখনই হাত কচ্লাইতে লাগিল—বলিল, “আর যে দিব্য বল, সেই দিব্য করিব, রক্ষা কর।”
নিশি। আচ্ছা, দিব্য করিতে হইবে না—তুমি আমাদের হাতে আছ। শোন, আমি বড় কুলীনের মেয়ে। আমাদের ঘরে পাত্র যোটা ভার। আমার একটি পাত্র যুটিয়াছিল, (পাঠক জানেন, সব মিথ্যা) কিন্তু আমার ছোট বহিনের যুটিল না। আজিও তাহার বিবাহ হয় নাই।
হর। বয়স কত হইয়াছে?
নিশি। পঁচিশ ত্রিশ।
হর। কুলীনের মেয়ে অমন অনেক থাকে।
নিশি। থাকে, কিন্তু আর তার বিবাহ না হইলে অঘরে পড়িবে, এমন গতিক হইয়াছে। তুমি আমার বাপের পালটি ঘর। তুমি যদি আমার ভগিনীকে বিবাহ কর, আমার বাপের কুল থাকে। আমিও এই কথা বলিয়া রাণীজির কাছে তোমার প্রাণ ভিক্ষা করিয়া লই।