নবম পরিচ্ছেদ
ঝড় থামিল; নৌকাও থামিল। দেবী বজরার জানেলা হইতে দেখিতে পাইলেন, প্রভাত হইতেছে। বলিলেন, “নিশি। আজ সুপ্রভাত!”
নিশি বলিল, “আমি আজ সুপ্রভাত!”
দিবা। তুমি অবসান, আমি সুপ্রভাত!
নিশি। যে দিন আমার অবসান হইবে, সেই দিনই আমি সুপ্রভাত বলিব। এ অন্ধকারের অবসান নাই। আজ বুঝিলাম, দেবী চৌধুরাণীর সুপ্রভাত—কেন না, আজ দেবী চৌধুরাণীর অবসান।
দিবা। ও কি কথা লো পোড়ারমুখী?
নিশি। কথা ভাল। দেবী মরিয়াছে। প্রফুল্ল শ্বশুরবাড়ী চলিল।
দেবী। তার এখন দেরী ঢের। যা বলি, কর দেখি। বজরা বাঁধিতে বল দেখি।
নিশি হুকুম জারি করিল—মাঝিরা তীরে লাগাইয়া বজরা বাঁধিল। তার পর দেবী বলিল, “রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা কর, কোথায় আসিয়াছি? রঙ্গপুর কত দূর? ভূতনাথ কত দূর?”
রঙ্গরাজ জিজ্ঞাসায় বলিল, “এক রাত্রে চারি দিনের পথ আসিয়াছি। রঙ্গপুর এখান হইতে অনেক দিনের পথ। ডাঙ্গা-পথে ভূতনাথে এক দিনে যাওয়া যাইতে পারে।”
“পাল্কী বেহারা পাওয়া যাইবে?”
“আমি চেষ্টা করিলে সব পাওয়া যাইবে।”
দেবী নিশিকে বলিল, “তবে আমার শ্বশুরকে স্নানাহ্নিকে নামাইয়া দাও।”
দিবা। এত তাড়াতাড়ি কেন?
নিশি। শ্বশুরের ছেলে সমস্ত রাত্রি বাহিরে বসিয়া আছে, মনে নাই? বাছাধন সমুদ্র লঙ্ঘন করিয়া লঙ্কায় আসিতে পারিতেছে না, দেখিতেছ না?
এই বলিয়া নিশি রঙ্গরাজকে ডাকিয়া, হরবল্লভের সাক্ষাতে বলিল, “সাহেবটাকে ফাঁসি দিতে হইবে। ব্রাহ্মণটাকে এখন শূলে দিয়া কাজ নাই। উহাকে পাহারাবন্দী করিয়া স্নানাহ্নিকে পাঠাইয়া দাও।”
হরবল্লভ বলিলেন, “আমার উপর হুকুম কিছু হইয়াছে?”