পাতা:দেবী চৌধুরাণী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাঠভেদ
১৫৩

 পৃ. ৯৭, প. ৬, ‘পদবন্দনা করিলেন।’ কথাগুলির পর ছিল—

ব্রজেশ্বর মনে মনে স্থির সংকল্প করিয়াছিলেন যে, এ ডাকাইতির টাকা স্পর্শ করা যাইবে না—“তাহা হইলে আমরা সেই পাপীয়সীর”—হায় প্রফুল্ল এখন পাপীয়সী!—“পাপীয়সীর পাপের ভাগী হইব।” কিন্তু ব্রজেশ্বরের পিতৃভক্তিই সে প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘনের কারণ হইল।

 পৃ. ৯৭, প. ১১, ‘আমার শ্বশুর টাকা দিতে’ কথা কয়টির পূর্ব্বে ছিল—

 ব্রজেশ্বর যদি বলেন যে, “টাকা পাই নাই” তবে স্পষ্ট মিথ্যা কথা হয়। ব্রজেশ্বর যদি এ কালের ছেলে হইতেন, তবে ইংরেজি পড়িয়া “Lie direct” সম্বন্ধে এ স্থলে কি বিবেচনা করিতেন, বলিতে পারি না, কিন্তু ব্রজেশ্বর সে কেলে ছেলে—একটা “Lie direct” সম্বন্ধে অবস্থাবিশেষে তাঁহার আপত্তি ছিল না। কিন্তু আর যেখানে ব্রজেশ্বর মিথ্যা কথা বলিতে পারুক আর না পারুক, বাপের সম্মুখে নহে। মুখ দিয়া কখনও বাহির হয় নাই। ব্রজেশ্বর বলিতে পারিল না, টাকা পাই নাই। ব্রজেশ্বর চুপ করিয়া রহিল।

 পুত্রকে নিরুত্তর দেখিয়া হরবল্লভ হতাশ্বাস হইয়া মাথায় হাত দিয়া বসিলেন। ব্রজেশ্বর দেখিলেন, চুপ করিয়া থাকাও মিথ্যাবাদ হইতেছে। ব্রজেশ্বর টাকা আনিয়াছেন, অথচ তাঁহাকে নিরুত্তর দেখিয়া হরবল্লভ বুঝিতেছেন যে, ব্রজ টাকা আনে নাই। ব্রজেশ্বরের মোটা বুদ্ধিতে বোধ হইল যে, আমি বাপকে প্রবঞ্চনা করিতেছি। আমার মাজ্জিতবুদ্ধি, মার্জ্জিতরুচি, মাজ্জিতপাদুক একেলে ইংরেজিনবিসের সূক্ষ্ম বুদ্ধিতে ইহাই উপলব্ধ হইত যে, “আমি ত মিছে কিছুই বলি নাই— যেটুকু বলিয়াছি, সাঁচা সত্য। তবে দেবী চৌধুরাণীর টাকার কথা আমি বলিতে বাধ্য নই—কেন না, সে টাকা ত আনিবার কোন কথাও ছিল না, আমাকে সে কথা জিজ্ঞাসাও হয় নাই। আর সে ডাকাতির টাকা—গ্রহণ করিলে পিতৃঠাকুর মহাশয় পাপ-পঙ্কে নিমগ্ন হইবেন, অতএব সে কথা প্রকাশ না করাই আমার ন্যায় বিশুদ্ধাত্মার কাজ। বিশেষ, আমার মুখ দিয়া ত মিথ্যা বাহির হয় নাই—তা বাবা কেন জেলে যান না—আমি কি কর্‌ব?” ব্রজেশ্বর তত বিশুদ্ধাত্মা নয়—সে সে রকম ভাবিল না। তার বাপ মাথায় হাত দিয়া নীরব হইয়া বসিয়াছে—দেখিয়া তাঁর বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল। ব্রজেশ্বর আর থাকিতে পারিলেন না—বলিয়া ফেলিলেন,

 পৃ. ১২৪, প. ২২, ‘আমার ইহাতে কথা কহা’ কথা কয়টির পূর্ব্বে ছিল—

 আমি অতি ক্ষুদ্র চাকরাণী।

 পৃ. ১২৪, প. ২৬, ‘ব্যক্তিকে নিশান দিতেছে।”’ কথা কয়টির পর ছিল—

 পরে দিবাকে দেখাইয়া বলিল, “এই যথার্থ রাণীজি।”

 পৃ. ১২৪, শেষ দুই ছত্রের পরিবর্ত্তে ছিল—

 এই স্থলে আমরা বলিতে বাধ্য যে, দেবীর এই উক্তি, আধুনিক পাশ্চাত্য ধর্ম্মনীতি শাস্ত্রানুসারে বিচার করিতে গেলে গর্হি‌ত বলিতে হয়। কেন না, কথাটা মিছা কথা। ইহা