এই বলিয়া প্রফুল্ল বাহিরে আসিল। দেখিল, তাহার শাশুড়ী তাহার তল্লাস করিতেছেন। প্রফুল্লকে দেখিয়া গিন্নী বলিলেন, “কোথা ছিলে মা?”
প্র। বাড়ী ঘর দেখিতেছিলাম।
গিন্নী। আহা! তোমারই বাড়ী ঘর, বাছা—তা কি কর্ব? তোমার শ্বশুর কিছুতেই মত করেন না।
প্রফুল্লের মাথায় বজ্রাঘাত হইল। সে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল। কাঁদিল না—চুপ করিয়া রহিল। শাশুড়ীর বড় দয়া হইল। গিন্নী মনে মনে কল্পনা করিলেন—আর একবার নথনাড়া দিয়া দেখিব। কিন্তু সে কথা প্রকাশ করিলেন না—কেবল বলিলেন, “আজ আর কোথায় যাইবে? আজ এইখানে থাক। কাল সকালে যেও।”
প্রফুল্ল মাথা তুলিয়া বলিল, “তা থাকিব—একটা কথা ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিও। আমার মা চরকা কাটিয়া খায়, তাহাতে এক জন মানুষের এক বেলা আহার কুলায় না। জিজ্ঞাসা করিও—আমি কি করিয়া খাইব? আমি বাগ্দীই হই—মুচিই হই—তাঁহার পুত্রবধূ। তাঁহার পুত্ত্রবধূ কি করিয়া দিনপাত করিবে?”
শাশুড়ী বলিল, “অবশ্য বলিব।” তার পর প্রফুল্ল উঠিয়া গেল।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
সন্ধ্যার পর সেই ঘরে সাগর ও প্রফুল্ল, দুই জনে দ্বার বন্ধ করিয়া চুপি চুপি কথাবার্ত্তা কহিতেছিল, এমন সময়ে কে আসিয়া কপাটে ঘা দিল। সাগর জিজ্ঞাসা করিল, “কে গো?”
“আমি গো।”
সাগর প্রফুল্লের গা টিপিয়া চুপি চুপি বলিল, “কথা ক’স্নে; সেই কালপেঁচাটা এসেছে।”
প্র। সতীন?
সা। হ্যাঁ—চুপ!