ব্রজ নীরব—বাপের সাক্ষাতে বাইশ বছরের ছেলে—হীরার ধার হইলেও সেকালে কথা কহিত না—এখন যত বড় মূর্খ ছেলে, তত বড় লম্বা স্পীচ্ ঝাড়ে।
কর্ত্তা বলিতে লাগিলেন, “সে বাগ্দী বেটী—আজ এখানে এসেছে—জোর ক’রে থাকবে, তা তোমার গর্ভধারিণীকে বল্লেম যে, ঝাঁটা মেরে তাড়াও। মেয়েমানুষ মেয়েমানুষের গায়ে হাত কি দিতে পারে? এ তোমার কাজ। তোমারই অধিকার—আর কেহ স্পর্শ করিতে পারে না। তুমি আজ রাত্রে তাকে ঝাঁটা মেরে তাড়াইয়া দিবে। নহিলে আমার ঘুম হইবে না।”
গিন্নী বলিলেন, “ছি! বাবা, মেয়েমানুষের গায়ে হাত তুল না। ওঁর কথা রাখিতেই হইবে, আমার কথা কিছু চল্বে না? তা যা কর, ভাল কথায় বিদায় করিও।”
ব্রজ বাপের কথায় উত্তর দিল, “যে আজ্ঞা।” মার কথায় উত্তর দিল, “ভাল।”
এই বলিয়া ব্রজেশ্বর একটু দাঁড়াইল। সেই অবকাশে গৃহিণী কর্ত্তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি যে বৌকে তাড়াবে—বৌ খাবে কি করিয়া?”
কর্ত্তা বলিলেন, “যা খুসি করুক—চুরি করুক, ডাকাতি করুক—ভিক্ষা করুক।”
গৃহিণী ব্রজেশ্বরকে বলিয়া দিলেন, “তাড়াইবার সময়ে বৌমাকে এই কথা বলিও। সে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল।”
ব্রজেশ্বর পিতার নিকট হইতে বিদায় হইয়া ব্রহ্মঠাকুরাণীর নিকুঞ্জে গিয়া দর্শন দিলেন। দেখিলেন, ব্রহ্মঠাকুরাণী তদ্গত চিত্তে মালা জপ করিতেছেন, আর মশা তাড়াইতেছেন। ব্রজেশ্বর বলিলেন, “ঠাকুরমা!”
ব্রহ্ম। কেন, ভাই?
ব্রজ। আজ না কি নূতন খবর?
ব্রহ্ম। কি নূতন? সাগর আমার চরকাটা ভেঙ্গে দিয়েছে তাই? তা ছেলেমানুষ, দিয়েছে দিয়েছে। চরকা কাট্তে তার সাধ গিয়েছিল—
ব্রজ। তা নয় তা নয়—বলি আজ না কি—
ব্রহ্ম। সাগরকে কিছু বলিও না। তোমরা বেঁচে থাক, আমার কত চরকা হবে। তবে বুড়ো মানুষ—
ব্রজ। বলি আমার কথাটা শুনবে?
ব্রহ্ম। বুড়ো মানুষ, কবে আছি কবে নেই, দুটো পৈতে তুলে বামুনকে দিই বৈ ত নয়। তা যাক্ গে—