পাতা:দেবী চৌধুরাণী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ
৩৭

 ফুলমণি বলিল, “কেন, আমি কোথায় গিয়াছিলাম?”

 অলকমণি। কোথায় আর যাবি? বামুনদের বাড়ী শুতে গিয়েছিলি, তা এত বেলা অবধি এলি না, তাই জিজ্ঞাসা কর্‌ছি।

 ফুল। তুই চোকের মাথা খেয়েছিস্ তার কি হবে? ভোরের বেলা তোর সমুখ দিয়ে এসে শুলেম—দেখিস্ নে?

 অলকমণি বলিল, “সে কি, বোন্? আমি তোর বেলা দেখে তিন বার বামুনদের বাড়ী গিয়ে তোকে খুঁজে এলাম। তা তোকেও দেখ্‌লাম না—কাকেও দেখ্‌লাম না। হ্যাঁ লা! প্রফুল্ল আজ কোথা গেছে লা?”

 ফুল। (শিহরিয়া) চুপ্‌ কর! দিদি চুপ্‌! ও কথা মুখে আনিস্ না।

 অল। (সভয়ে) কেন, কি হয়েছে?

 ফুল। সে কথা বল্‌তে নেই।

 অল। কেন লা?

 ফুল। আমরা ছোট লোক—আমাদের দেবতা বামুনের কথায় কাজ কি, বোন্?

 অল। সে কি? প্রফুল্ল কি করেছে?

 ফুল। প্রফুল্ল কি আর আছে?

 অল। (পুনশ্চ সভয়ে) সে কি? কি বলিস্?

 ফুল। (অতি অস্ফুটস্বরে) কারও সাক্ষাতে বলিস্ নে—কাল তার মা এসে তাকে নিয়ে গেছে।

 ভগিনী। অ্যাঁ!

 অলকমণির গা থর থর করিয়া কাঁপিতে লাগিল। ফুলমণি তখন এক আষাঢ়ে গল্প ফাঁদিল। ফুলমণি প্রফুল্লের বিছানায় রাত্রি তৃতীয় প্রহরের সময়ে তার মাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছিল। ক্ষণপরেই ঘরের ভিতর একটা ভারি ঝড় উঠিল—তার পর আর কেহ কোথাও নাই। ফুলমণি মূর্চ্ছিতা হইয়া, দাঁতকপাটি লাগিয়া পড়িয়া রহিল। হত্যাদি। ইত্যাদি। ফুলমণি উপন্যাসের উপসংহারকালে দিদিকে বিশেষ করিয়া সাবধান করিয়া দিল, “এ সকল কথা কাহারও সাক্ষাতে বলিস্ না—দেখিস্, আমার মাথা খাস্।”

 দিদি বলিলেন, “না গো! এ কথা কি বলা যায়?”, কিন্তু কথিতা দিদি মহাশয়া তখনই চাল ধুইবার ছলে ধুচুনী হাতে পল্লী-পরিভ্রমণে নিষ্ক্রান্ত হইলেন এবং ঘরে ঘরে