ব্রা। টাকা আছে? দাও, ভাঙ্গাইয়া দিতেছি।
প্র। আমার কাছে টাকাও নাই।
ব্রা। তবে কি নিয়া হাটে যাইতেছিলে?
প্র। একটি মোহর আছে।
ব্রা। দেখি।
প্রফুল্ল মোহর দেখাইল। ব্রাহ্মণ তাহা দেখিয়া ফিরাইয়া দিল; বলিল, “মোহর ভাঙ্গাইয়া দিই, এত টাকা আমার কাছে নাই। চল, তোমার সঙ্গে তোমার ঘরে যাই, তুমি সেইখানে আমাকে পয়সা দিও।”
প্র। ঘরেও আমার পয়সা নাই।
ব্রা। সবই মোহর! তা হৌক, চল, তোমার ঘর চিনিয়া আসি। যখন তোমার হাতে পয়সা হইবে, তখন আমায় দিও। আমি গিয়া নিয়া আসিব।
এখন “সবই মোহর” কথাটা প্রফুল্লের কানে ভাল লাগিল না। প্রফুল্ল বুঝিল যে, এ চতুর ব্রাহ্মণ বুঝিয়াছে যে, প্রফুল্লের অনেক মোহর আছে। আর সেই লোভেই তাহার বাড়ী দেখিতে যাইতে চাহিতেছে। প্রফুল্ল জিনিষপত্র যাহা লইয়াছিল, তাহা রাখিল। বলিল, “আমাকে হাটেই যাইতে হইবে। আমার কাপড় চোপড়ের বরাৎ আছে।”
ব্রাহ্মণ হাসিল। বলিল, “মা! মনে করিতেছ, আমি তোমার বাড়ী চিনিয়া আসিলে, তোমার মোহরগুলি চুরি করিয়া লইব? তা তুমি কি মনে করিয়াছ, হাটে গেলেই, আমাকে এড়াইতে পারিবে? আমি তোমার সঙ্গ না ছাড়িলে তুমি ছাড়িবে কি প্রকারে?”
সর্ব্বনাশ! প্রফুল্লের গা কাঁপিতে লাগিল।
ব্রাহ্মণ বলিল, “তোমার সঙ্গে আমি প্রতারণা করিব না।—আমাকে ব্রাহ্মণপণ্ডিত মনে কর, আর যাই মনে কর, আমি ডাকাইতের সর্দ্দার। আমার নাম ভবানী পাঠক।”
প্রফুল্ল স্পন্দহীন। ভবানী পাঠকের নাম সে দুর্গাপুরেও শুনিয়াছিল, ভবানী পাঠক বিখ্যাত দস্যু। তাহার ভয়ে বরেন্দ্রভূমি কম্পমান। প্রফুল্লের বাক্যস্ফুর্ত্তি হইলনা।
ভবানী বলিল, “বিশ্বাস না হয়, প্রত্যক্ষ দেখ।”
এই বলিয়া ভবানী ঘরের ভিতর হইতে একটা নাগরা বা দামামা বাহির করিয়া, তাহাতে গোটাকত ঘা দিল। মুহূর্ত মধ্যে জন পঞ্চাশ ষাট কালান্তক যমের মত জওয়ান