ভ। চল, তবে আমরা ইজারাদারের কাছারি লুঠিয়া, গ্রামের লোকের ধন গ্রামের লোককে দিয়া আসি। গ্রামের লোক আনুকূল্য করিবে?
রঙ্গ। বোধ হয় করিতে পারে।
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
ভবানী ঠাকুর অঙ্গীকার মত দুই জন স্ত্রীলোক পাঠাইয়া দিলেন। একজন হাটে ঘাটে যাইবে, আর একজন প্রফুল্লের কাছে অনুক্ষণ থাকিবে। দুই জন দুই রকমের। যে হাটে ঘাটে যাইবে, তাহার নাম গোব্রার মা, বয়স তিয়াত্তর বছর, কালো আর কালা। যদি একেবারে কাণে না শুনিত, ক্ষতি ছিল না, কোন মতে ইসারা ইঙ্গিতে চলিত; কিন্তু এ তা নয়। কোন কোন কথা কখন কখন শুনিতে পায়, কখন কোন কথা শুনিতে পায় না। এ রকম হইলে বড় গণ্ডগোল বাঁধে।
যে কাছে থাকিবার জন্য আসিয়াছিল, সে সম্পূর্ণরূপে ভিন্নপ্রকৃতির স্ত্রীলোক। বয়সে প্রফুল্লের অপেক্ষা পাঁচ সাত বৎসরের বড় হইবে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ—বর্ষাকালের কচি পাতার মত রঙ। রূপ উছলিয়া পড়িতেছে।
দুই জনে একত্র আসিল—যেন পূর্ণিমা অমাবস্যার হাত ধরিয়াছে। গোব্রার মা প্রফুল্লকে প্রণাম করিল। প্রফুল্ল জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার নাম কি গা?”
গোব্রার মা শুনিতে পাইল না; অপরা বলিল, “ও একটু কালা—ওকে সবাই গোব্রার মা বলে।”
প্র। গোব্রার মা! তোমার কয়টি ছেলে গা?
গোব্রার মা। আমি ছিলেম আর কোথায়? বাড়ীতে ছিলেম।
প্র। তুমি কি জেতের মেয়ে?
গোব্রার মা। যেতে আসতে খুব পারব। যেখানে বলিবে, সেইখানেই যাব।
প্র। বলি, তুমি কি লোক?
গোব্রার মা। আর তোমার লোকে কাজ কি মা! আমি একাই তোমার সব কাজ ক’রে দেব। কেবল দুই একটা কাজ পার্ব না।
প্র। পার্বে না, কি?