তোমার ইচ্ছামত ব্যয় করিও—আমি নিষেধ করিব না। আমি পরামর্শ দিব,—ইচ্ছা হয় গ্রহণ করিও। আহার আমি আর যোগাইব না,—তুমি আপনি আপনার দিনপাতের উপায় করিবে। কয়টি কথা বলিয়া দিই। কথাগুলি অনেকবার বলিয়াছি,—আর একবার বলি। এখন তুমি কোন্ পথ অবলম্বন করিবে?”
প্রফুল্ল বলিল, “কর্ম্ম করিব, জ্ঞান আমার মত অসিদ্ধের জন্য নহে।”
ভবানী বলিল, “ভাল ভাল, শুনিয়া সুখী হইলাম। কিন্তু কর্ম্ম, অসক্ত হইয়া করিতে হইবে। মনে আছে ত, ভগবান্ বলিয়াছেন—
“তস্মাদসক্তঃ সততং কার্য্যং কর্ম্ম সমাচর।
অসক্তো হ্যাচরণ্ কর্ম্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ॥”
এখন অনাসক্তি কি? তাহা জান। ইহার প্রথম লক্ষণ, ইন্দ্রিয়-সংযম। এই পাঁচ বৎসর ধরিয়া তোমাকে তাহা শিখাইয়াছি, এখন আর বেশী বলিতে হইবে না। দ্বিতীয় লক্ষণ, নিরহঙ্কার। নিরহঙ্কার ব্যতীত ধর্ম্মাচরণ নাই। ভগবান্ বলিয়াছেন—
“প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্ম্মাণি সর্ব্বশঃ।
অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্ত্তাহমিতি মন্যতে॥”
ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা যে সকল কর্ম্ম কৃত, তাহা আমি করিলাম, এই জ্ঞানই অহঙ্কার। যে কাজই কর, তোমার গুণে তাহা হইল, কখনও তাহা মনে করিবে না। করিলে পুণ্য কর্ম্ম অকর্ম্মত্ব প্রাপ্ত হয়। তার পর তৃতীয় লক্ষণ এই যে, সর্ব্ব-কর্ম্ম-ফল শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করিবে। ভগবান্ বলিয়াছেন—
“যৎ করোষি, যদশ্নাসি, যজ্জুহোষি দদাসি যৎ।
যৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ মদর্পণম্॥”
এখন বল দেখি মা, তোমার এই ধনরাশি লইয়া তুমি কি করিবে?”
প্র। যখন আমার সকল কর্ম্ম শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করিলাম, তখন আমার এ ধনও শ্রীকৃষ্ণে অর্পণ করিলাম।
ভ। সব?
প্র। সব।
ভ। ঠিক তাহা হইলে কর্ম্ম অনাসক্ত হইবে না। আপনার আহারের জন্য যদি তোমাকে চেষ্টিত হইতে হয়, তাহা হইলে আসক্তি জন্মিবে। অতএব তোমাকে হয় ভিক্ষাবৃত্ত হইতে হইবে, নয় এই ধন হইতেই দেহ রক্ষা করিতে হইবে। ভিক্ষাতেও