পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইল, গত রাত্রির বেশভূষা, জঁাকজমক, হীর মতি চানি বা রাণীf কাল দেবীকে রত্নাতরণে রাজরাণীর মত দেখাইয়াছিল—আজ গঙ্গামূৰ্ত্তিকার জার। দেখাইছে। যে স্থায়, সে মাট ছাড়িয়া হাঁরা পরে কেন? : so মেৰী এই অনুপম বেশে একজন মাত্র রলোক লভিবাহার ਜੋ । চলিল—বজরায় উঠিল না। এরূপ অনেক দূর গিয়া একটা জঙ্গলে প্রবেশ করিল। আমরা । কথায় কথায় জঙ্গলের কথা বলিতেছি—কথায় কথায় ডাকাইৰ্তের কথা বলিতেছি-ইহাতে পাঠক মনে করিবেন না, আমরা কিছুমাত্র অত্যুক্তি করিতেছি, অথবা জঙ্গল বা ডাকাইত ভালবাসি। যে সময়ের কথা বলিতেছি, সে সময়ে সে দেশ জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এখনও অনেক স্থানে ভয়ানক জঙ্গল—কতক কতক আমি স্বচক্ষে দেখিয়া আসিয়াছি। আর ডাকাইভের ত কথাই নাই। পাঠকের স্মরণ থাকে যেন যে, ভারতবর্ষের ডাকাইত শাসন করিতে মাকুইস অব হেষ্টিংস্কে যত বড় যুদ্ধোন্তম করিতে হইয়াছিল, পঞ্জাবের লড়াইয়ের পূৰ্ব্বে আর কখন তত করিতে হয় নাই। এ সকল অরাজকতার সময়ে ডাকাইতিই ক্ষমতাশালী লোকের ব্যবসা ছিল। যাহারা দুৰ্ব্বল বা গণ্ডমূর্ধ, তাহারাই “ভাল মানুষ" হইত। ডাকাইতিতে তখন কোন নিন্দা বা লজ্জা ছিল না। w - দেবী জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিয়াও অনেক দূর গেল। একটা গাছের তলায় পৌঁছিয়া পরিচারিকাকে বলিল, “দিবা, তুই এখানে বস্। আমি আসিতেছি। এ বনে বাঘ ভালুক বড় অল্প। আসিলেও তোর ভয় নাই। লোক পাহারায় আছে।” এই বলিয়া দেবী সেখান হইতে আরও গাঢ়তর জঙ্গলমধ্যে প্রবেশ করিল। অতি নিবিড় জঙ্গলের ভিতর একটা মুরঙ্গ। পাথরের সিড়ি আছে। যেখানে নামিতে হয়, সেখানে অন্ধকার—পাথরের ঘর। পূৰ্ব্বকালে বোধ হয় দেবালয় ছিল—এক্ষণে কাল সহকারে চারি পাশে মাটি পড়িয়া গিয়াছে। কাজেই তাহাতে নামিবার সিড়িগড়িবার প্রয়োজন হইয়াছে। দেবী অন্ধকারে সিড়িতে নামিল। সেই ভূগর্ভস্থ মন্দিরে মিট মিট্‌ করিয়া একটা প্রদীপ জলিতেছিল। তার আলোতে এক শিবলিঙ্গ দেখা গেল। এক ব্রাহ্মণ সেই শিবলিঙ্গের সম্মুখে বসিয়া তাহার পূজা করিতেছিল। দেবী শিবলিঙ্গকে প্রণাম করিয়া, ব্রাহ্মণের কিছু দূরে বসিলেন। দেখিয়া ব্রাহ্মণ পূজা সমাপনপূর্বক, আচমন করিয়া দেবীর সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন। ব্রাহ্মণ বলিল, “মা ! কাল রাত্রে—তুমি কি করিয়াছ ? তুমি কি ডাকাইতি করিয়াছ না কি ?” . -