পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড-সপ্তম পরিচ্ছেদ । ১২১ দিতেছ না। কিন্তু তাহাতে তোমাদের অভিপ্রায় সিদ্ধ হইবে না। আমি এখন ছুই জনকেই ধরিয়া লইয়া যাইব । ইহার পর প্রমাণের দ্বারা যে দেবী চৌধুরাণী বলিয়া সাব্যস্ত হইবে, সেই । ফাসি যাইবে। যদি প্রমাণের দ্বারা এ কথা পরিষ্কার না হয়, তবে দুই জনেই ফঁাসি যাইবে।” তখন নিশি ও দিবা ছুই জনেই বলিল, “এত গোলযোগে কাজ কি? আপনার সঙ্গে কি গোইনা নাই ? যদি গোইন্দ থাকে, তবে তাহাকে ডাকাইলেই ত সে বলিয়া দিতে পরিবে,-কে যথার্থ দেবী চৌধুরাণী।” - হরবল্লভকে বজরায় আনিবে, দেবীর এই প্রধান উদ্দেশ্য। হরবল্লভের রক্ষার ব্যবস্থা না করিয়া, দেবী আত্মরক্ষার উপায় করিবে না, ইহা স্থির। তাহাকে বজরায় না আনিতে পারিলে হরবল্লভের রক্ষার নিশ্চয়তা হয় না। সাহেব মনে করিলেন, “এ পরামর্শ মন্দ নহে ।” তখন র্তাহার সঙ্গে যে সিপাহী আসিয়াছিল, তাহাকে বলিলেন, “গোইন্দাকে ডাক।” সিপাহী এক ছিপের এক জন জমাদার . সাহেবকে ডাকিয়া বলিল, “গোইন্দাকে ডাক।” তখন গোইন্দাকে ডাকাডাকির গোল পড়িয়া গেল। গোইন্দা কোথায়, গোইনা কে, তাহ কেহই জানে না, কেবল চারি দিকে ডাকাডাকি করে । সপ্তম পরিচ্ছেদ বস্তুতঃ হরবল্লভ রায় মহাশয় যুদ্ধক্ষেত্রেই উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু সে ইচ্ছাপূর্বক নহে, ঘটনাধীন। প্রথমে বড় ঘেঁষেন নাই। “শুঙ্গিণাংশস্ত্রপাণীনাং” ইত্যাদি চাণক্যপ্রদত্ত সম্পদেশ স্মরণ করিয়া, তিনি সিপাহীদিগের ছিপে উঠেন নাই। একখানা পৃথক ডিঙ্গিতে থাকিয়া, লেফটেনাণ্ট, সাহেবকে বজরা দেখাইয়া দিয়া, অৰ্দ্ধ ক্রোশ দূরে পলাইয়া গিয়া ডিঙ্গী ও প্রাণ রক্ষা করিয়াছিলেন। তার পর দেখিলেন, আকাশে বড় ঘনঘট । মনে করিলেন, ঝড় উঠিবে ও এখনই আমার ডিঙ্গী ডুবিয়া যাইবে, টাকার লোভে আসিয়া আমি প্রাণ হারাইব—আমার সৎকারও হইবে না। তখন রায় মহাশয় ডিঙ্গী হইতে তীরে অবতরণ করিলেন। কিন্তু তীরে সেখানে কেহ কোথাও নাই দেখিয়া বড় ভয় হইল। সাপের ভয়, বাঘের ভয়, চোর ডাকাইতের ভয়, ভূতেরও ভয়। হরবল্লভের মনে হইল, কেন এমন বকুমারি করিতে আসিয়াছিলাম। হরবল্লভের কাল্লা আসিল । - এমন সময়ে হঠাৎ বন্দুকের হুড়মুড়ি, সিপাহী বল্লুকদার্জের হৈ হৈ শব্দ সব বন্ধ হইয়