পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

恢 দেবী চৌধুরাণী । . . পারিল না। বরযাত্রদিগের লুচি মণ্ডায়, দেশ কাল পাত্র বিবেচনায়, উত্তম ফলাহার করাইল । কিন্তু কন্যাযাত্ৰগণের কেবল চিড়া দই । ইহাতে প্রতিবাসী কস্তাযাত্রেরা অপমান বোধ করিলেন। র্তাহারা খাইলেন না—উঠিয়া গেলেন। ইহাতে প্রফুল্লর মার সঙ্গে তাহাদের কোন্দল বাধিল ; প্রফুল্লের মা বড় গালি দিল । প্রতিবাসীরা একটা বড় রকম : শোধ লইল । পাকস্পর্শের দিন হরবল্লভ বেহাইনের প্রতিবাসী সকলকে নিমন্ত্রণ করিলেন। তাহারা কেহ গেল না—একজন লোক দিয়া বলিয়া পাঠাইল যে, যে কুলটা, জাতিভ্রষ্ট, তাহার সঙ্গে হরবল্লভবাবুর কুটুম্বতা করিতে হয় করুন,—বড়মানুষের সব শোভা পায়, কিন্তু আমরা কাঙ্গাল গরিব, জাতই আমাদের সম্বল—আমরা জাতিভ্রষ্টার কন্যার পাকস্পর্শে জলগ্রহণ করিব না। সমবেত সভামধ্যে এই কথা প্রচার হইল। প্রফুল্লের মা একা বিধবা, মেয়েটি লইয়া ঘরে থাকে—তখন বয়সও যায় নাই–কথা অসম্ভব বোধ হইল না, বিশেষ, হরবল্লভের মনে হইল যে, বিবাহের রাত্রে প্রতিবাসীরা বিবাহ-বাড়ীতে খায় নাই। প্রতিবাসীরা মিথ্যা বলিবে কেন ? হরবল্লভ বিশ্বাস করিলেন। সভার সকলেই বিশ্বাস করিল। নিমন্ত্রিত সকলেই ভোজন করিল বটে—কিন্তু কেহই নববধূর স্পৃষ্ট ভোজ্য খাইল না। পরদিন হরবল্লভ বধুকে মাত্রালয়ে পাঠাইয়া দিলেন। সেই অবধি প্রফুল্ল ও তাহার মাতা তাহার পরিত্যাজ্য হইল। সেই অবধি আর কখন তাহদের সংবাদ লইলেন না ; পুত্রকে লইতেও দিলেন না। পুত্রের অন্য বিবাহ দিলেন। প্রফুল্লের মা দুই এক বার কিছু সামগ্রী পাঠাইয়া দিয়াছিল, হরবল্লভ তাহ ফিরাইয়া দিয়াছিলেন। তাই আজ সে বাড়ীতে প্রবেশ করিতে প্রফুল্লের মার পা কঁাপিতেছিল। কিন্তু যখন আসা হইয়াছে, তখন আর ফেরা যায় না। কন্যা ও মাত সাহসে ভর করিয়া গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। তখন কৰ্ত্তা অন্তঃপুরমধ্যে আপরাতুিক নিদ্রার মুখে । অভিভূত। গৃহিণী—অর্থাৎ প্রফুল্লের শাশুড়ী, পা ছড়াইয়া পাকা চুল তুলাইতেছিলেন। এমন : সময়ে, সেখানে প্রফুল্ল ও তাহার মা উপস্থিত হইল। প্রফুল্ল মুখে আধ হাত ঘোমটা টানিয়া দিয়াছিল। তাহার বয়স এখন আঠার বৎসর। - গিন্নী ইহাদিগকে দেখিয়া বলিলেন, “তোমরা কে গা ?” প্রফুল্লের মা দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “কি বলিয়াই বা পরিচয় দিব ?” গিল্পী। কেন—পরিচয় আবার কি বলিয়া দেয় ? প্রফুল্লের মা। আমরা কুটুম্ব।