পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড-সপ্তম পরিচ্ছেদ २¢ প্রফুল্লের সে কথা আর মনে ছিল না, সে ব্রজেশ্বরের আদর পাইয়াছিল। প্রফুল্ল জিজ্ঞাসা করিল, “কি কথার উত্তর ?” ন। তুমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, কি করিয়া খাইবে ? প্র । তার আর উত্তর কি ? ন। ঠাকুর বলিয়াছেন, চুরি ডাকাতি করিয়া খাইতে বলিও । “দেখা যাবে” বলিয়া প্রফুল্ল বিদায় হইল । প্রফুল্ল আর কাহারও সঙ্গে কথা কহিল না । একেবারে বাহিরে খিড়কীদ্বার পার হইল । সাগর পিছু পিছু গেল। প্রফুল্ল তাহাকে বলিল, “আমি, ভাই, আজ চলিলাম। এ বাড়ীতে । আর আসিব না তুমি বাপের বাড়ী গেলে, সেখানে তোমার সঙ্গে দেখা হইবে।” সা। তুমি আমার বাপের বাড়ী চেন ? প্র । না চিনি, চিনিয়া যাইব । সা। তুমি আমার বাপের বাড়ী যাবে ? প্র । আমার আর লজ্জা কি ? সা। তোমার মা তোমার সঙ্গে দেখা করিবেন বলিয়া দাড়াইয়া আছেন। বাগানের দ্বারের কাছে যথার্থ প্রফুল্লের মা দাড়াইয়া ছিল । সাগর দেখাইয়া দিল । . প্রফুল্ল মার কাছে গেল । সপ্তম পরিচ্ছেদ প্রফুল্ল ও প্রফুল্লের মা বাড়ী আসিল । প্রফুল্লের মার যাতায়াতে বড় শারীরিক কষ্ট গিয়াছে—মানসিক কষ্ট ততোধিক। সকল সময় সব সয় না। ফিরিয়া আসিয়া প্রফুল্লের মা জ্বরে পড়িল । প্রথমে জ্বর অল্প, কিন্তু বাঙ্গালীর ঘরের মেয়ে, বামনের ঘরের মেয়ে—তাতে বিধবা, প্রফুল্লের মা জ্বরকে জ্বর বলিয়া মানিল না। তারই উপর বেলা স্নান, জুটিলে আহার, পূৰ্ব্বমত চলিল। প্রতিবাসীরা দয়া করিয়া কখনও কিছু দিত, তাইতে আহার চলিত। ক্রমে জ্বর অতিশয় বৃদ্ধি পাইল—শেষে প্রফুল্লের মা শয্যাগত হইল। সেকালে সেই সকল গ্রাম্য প্রদেশে চিকিৎসাপত্র বড় ছিল না—বিধবারা প্রায়ই ঔষধ খাইত না—বিশেষ প্রফুল্লের এমন লোক নাই যে, কবিরাজ ডাকে। কবিরাজও দেশে না থাকারই মধ্যে। জর বাড়িল—বিকার প্রাপ্ত হইল, শেষে প্রফুল্লের মা সকল দুঃখ হইতে মুক্ত হইলেন। -