পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় খণ্ড-সপ্তম পরিচ্ছেদ bro - করিতে লাগিল। নিশি তখন সাগরকে বলিল, “যা, এখন তোর স্বামীর জন্য আপন হাতে তামাকু সাজিয়া লইয়া অভ্যায়।” - সাগর ক্ষিপ্রহস্তে সোনার আলবোলার উপর হইতে কলিকা লইয়া গিয়া, শীঘ্ৰ মৃগনাভিসুগন্ধি তামাকু সাজিয়া আনিল। আলবোলায় চড়াইয়া দিল। ব্রজেশ্বর বলিলেন, “আমাকে একটা হকায় নল করিয়া তামাকু দাও।” - নিশি বলিল, “কোন শঙ্কা নাই—ঐ আলবোলা উৎসৃষ্ট নয়। কেহ কখন উহাতে তামাকু খায় নাই। আমরা কেহ তামাকু খাই না।” ত্র। সে কি ? তবে এ আলবোলা কেন ? নিশি । দেবীর রাণীগিরির দোকানদারি— ব্র। তা হোঁক—আমি যখন আসিলাম, তখন যে তামাকু সাজা ছিল—কে খাইতেছিল? নিশি। কেহ না—সাজাও দোকানদারি— . . $. ঐ আলবোলা সেই দিন বাহির হইয়াছে—ঐ তামাকু সেই দিন কেনা হইয়া আসিয়াছে —সাগরের স্বামী আসিবে বলিয়া। ব্রজেশ্বর মুখনলটি পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন—অভূক্ত বোধ হয়। তখন ব্রজেশ্বর ধূমপানের অনিৰ্ব্বচনীয় মুখে মগ্ন হইলেন। নিশি তখন সাগরকে বলিল, , “তুই পোড়ারমুখী, আর দাড়াইয়া কি করিসূ–পুরুষমানুষে হকার নল মুখে করিলে আর কি স্ত্রী পরিবারকে মনে ঠাই দেয় ? যা, তুই গোটাকত পান সাজিয়া আন। দেখিস্—আপন হাতে পান সাজিয়া আনিস্—পরের সাজা আনিস না—পারিস্ যদি একটু ওষুধ করিসূ ” সাগর বলিল, “আপন হাতেই সাজা আছে—ওষুধ জানিলে আমার এমন দশা হইবে কেন ?” - এই বলিয়া সাগর চন্দন কপূর চুয়া গোলাবে সুগন্ধি পানের রাশি সোনার বাটা পূরিয়া আনিল। তখন নিশি বলিল, “তোর স্বামীকে অনেক বকেছিস্–কিছু জলখাবার নিয়ে আয়।” ব্ৰজেশ্বরের মুখ শুকাইল, “সৰ্ব্বনাশ! এত রাত্রে জলখাবার ! ঐট মাফ করিঙ ” কিন্তু কেহ তাহার কথা শুনিল নী—সাগর বড় তাড়াতাড়ি আর এক কামরায় বাট দিয়া, জলের হাতে মুছিয়া, একখানা বড় ভারী পুরু আসন পাতিয়া চারি পাঁচখানা রূপার থালে সামগ্রী সাজাইয়া ফেলিল। স্বর্ণপাত্রে উত্তম মুগন্ধি শীতল জল রাখিয়া দিল। জানিতে পারিয়া নিশি ব্রজেশ্বরকে বলিল, “ঠাই হইয়াছে—উঠ।” ব্ৰজেশ্বর উকি মারিয়া দেখিয়, নিশির কাছে যোড়হাত করিল। বলিল, “ডাকাইতি করিয়া ধরিয়া আনিয়া কয়েদ করিয়াছ— সে অত্যাচার সহিয়াছে—কিন্তু এত রাত্রে এ অত্যাচার সহিবে না—দোহাই।”