পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরোপাসনা মাত্র, অনম্ভ মুন্দরের সৌন্দর্য্যের বিকাশ এবং উপাসনা মাত্র ; চিত্তরঞ্জিনী বৃত্তির চরম অঙ্কুশীলন, চিত্তরঞ্জিনীবৃত্তিগুলিকে ঈশ্বরমুখী করা মাত্র । প্রাচীন ভারতে . স্ত্রীগণের জ্ঞানমার্গ নিষিদ্ধ, কেন না বেদাদির অধ্যয়ন নিষিদ্ধ। স্ত্রীলোকের পক্ষে কৰ্ম্মমার্গ কষ্টসাধ্য, কিন্তু ভক্তিতে তাহাদের বিশেষ অধিকার । ভক্তি, বলিয়াছি, “পরামুরক্তিরীশ্বরে।” অনুরাগ নানা কারণে জন্মিতে পারে ; কিন্তু সৌন্দর্য্যের মোহঘটিত যে অনুরাগ, তাহা মন্থন্ত্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা বলবান। অতএব অনন্ত সুন্দরের সৌন্দর্য্যের বিকাশ ও তাহার আরাধনাই অপরের হউক বা না হউক, স্ত্রীজাতির জীবন সার্থকতার মুখ্য উপায়। এই তত্ত্বাত্মক রূপকই রাসলীলা। জড়প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দৰ্য্য তাহাতে বর্তমান ; শরৎকালের পূর্ণচন্দ্র, শরৎপ্রবাহপরিপূর্ণ খামসলিলা যমুনা, প্রফুটিত কুসুমস্থবাসিত কুঞ্জবিহঙ্গমকূজিত বৃন্দাবনবনস্থলী, জড়প্রকৃতির মধ্যে অনন্ত সুন্দরের সশরীরে বিকাশ। তাহার সহায় বিশ্ববিমোহিনী বংশী । এইরূপ সৰ্ব্বপ্রকার চিত্তরঞ্জনের দ্বার স্ত্রীজাতির ভক্তি উদ্রিক্ত হইলে তাহার কৃষ্ণামুরাগিণী হইয়া কৃষ্ণে তন্ময়তাপ্রাপ্ত হইল ; আপনাকেই কৃষ্ণ বলিয়া জানিতে লাগিল, কৃষ্ণে নিরুদ্ধহৃদয়া ইদমুচু পরস্পরম্। কৃষ্ণোহহুমেতল্ললিতং ব্রজাম্যালোক্যতাং গতিং । অন্য ব্রীতি কৃষ্ণস্ত মম গীতির্নিশম্যতাং । দুষ্ট কালিয় । তিষ্ঠাত্র কৃষ্ণোহহমিতি চাপরা । বাকুমাস্ফোট্য কৃষ্ণস্য লীলাসৰ্ব্বস্বমাদদে ॥ অন্যা ব্ৰবীতি ভো গোপা নিঃশঙ্কৈঃ স্বীয়তামিহ । অলং বৃষ্টিভয়েনাত্র তো গোবৰ্দ্ধনে ময়া। ইত্যাদি জীবাত্মা ও পরমাত্মার যে অভেদজ্ঞান, জ্ঞানের তাহাই চিরোদ্দেশ্ব। মহাজ্ঞানীও সমস্ত জীবন ইহার সন্ধানে ব্যয়িত করিয়াও ইহা পাইয় উঠেন না। কিন্তু এই জ্ঞানহীন৷ গোপকন্যাগণ কেবল জগদীশ্বরের সৌন্দর্য্যের অমুরাগিণী হইয়া, ( অর্থাৎ আমি যাহাকে চিত্তরঞ্জিনীবৃত্তির অনুশীলন বলিতেছি তাহার সৰ্ব্বোচ্চ সোপানে উঠিয়া ) সেই অভেদজ্ঞান প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বরে বিলীন হইল। রাসলীলা রূপকের ইহাই স্কুল তাৎপৰ্য্য এবং আধুনিক বৈষ্ণবধর্শও সেই পথগামী । অতএব মনুষ্যত্বে, মনুষ্য জীবনে, এবং হিন্দুধৰ্ম্মে, চিত্তরঞ্জিনীবৃত্তির কত দূর আধিপত্য বিবেচনা কর । - - শিষ্য। এক্ষণে এই চিত্তরঞ্জিনীবৃত্তি সকলের অনুশীলন সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ উপদেশ প্রদান করুন ।