পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অথবা বঁহাদিগকে মানবদেহধারী ঈশ্বর মনে করা যায়, তাহারাই সেখানে বাঞ্ছনীয় আদর্শ হইতে পারেন। এই জন্য যীশুখৃষ্ট খ্ৰীষ্টিয়ানের আদর্শ, শাক্যসিংহ বৌদ্ধের আদর্শ । কিন্তু এরূপ ধৰ্ম্মপরিবর্দ্ধক আদর্শ যেমন হিন্দুশাস্ত্রে আছে, এমন আর পৃথিবীর কোন ধৰ্ম্মপুস্তকে নাই—কোন জাতির মধ্যে প্রসিদ্ধ নাই। জনকাদি রাজর্ষি, নারদাদি দেবর্ষি, বশিষ্ঠাদি ব্রহ্মধি, সকলেই অনুশীলনের চরমাদর্শ। তাহার উপর শ্রীরামচন্দ্র, যুধিষ্ঠির, অর্জুন, লক্ষ্মণ, দেবব্রত ভীষ্ম প্রভৃতি ক্ষত্রিয়গণ, আরও সম্পূর্ণতা-প্রাপ্ত আদর্শ। খৃষ্ট ও শাক্যসিংহ কেবল উদাসীন, কৌপীনধারী নিৰ্ম্মম ধৰ্ম্মবেত্তা। কিন্তু ইহার তা নয়। ইহারা সৰ্ব্বগুণবিশিষ্ট— ইহাদিগেতেই সর্ববৃত্তি সৰ্ব্বাঙ্গসম্পন্ন ফুৰ্ত্তি পাইয়াছে। ইহার সিংহাসনে বসিয়াও উদাসীন ; কাম্মুকহস্তেও ধৰ্ম্মবেত্তা ; রাজা হইয়াও পণ্ডিত ; শক্তিমান হইয়াও সৰ্ব্বজনে প্রেমময়। কিন্তু এই সকল আদর্শের উপর হিন্দুর আর এক আদর্শ আছে, র্যাহার কাছে আর সকল আদর্শ খাটে হইয়া যায়—যুধিষ্ঠির র্যাহার কাছে ধৰ্ম্ম শিক্ষা করেন, স্বয়ং অর্জন র্যাহার শিষ্য, রাম ও লক্ষ্মণ র্যাহার অংশমাত্র, যাহার তুল্য মহামহিমাময় চরিত্র কখন মনুষ্যভাষায় কীৰ্ত্তিত হয় নাই। আইস, আজ তোমাকে কৃষ্ণোপাসনায় দীক্ষিত করি। শিষ্য । সে কি ? কৃষ্ণ । গুরু । তোমর। কেবল জয়দেবের কৃষ্ণ ব৷ যাত্রার কৃষ্ণ চেন—তাই শিহরিতেছ। তাহারও সম্পূর্ণ অর্থ বুঝ না। তাহার পশ্চাতে, ঈশ্বরের সর্বগুণসম্পন্ন যে কৃষ্ণচরিত্র কীৰ্ত্তিত আছে তাহার কিছুই জান না। র্তাহার শারীরিক বৃত্তি সকল সৰ্ব্বাঙ্গীণ ফুৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইয়। অননুভবনীয় সৌন্দর্য্যে এবং অপরিমেয় বলে পরিণত , তাহার মানসিক বৃত্তি সকল সেইরূপ ফুৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইয়া সৰ্ব্বলোকাতীত বিদ্যা, শিক্ষা, বীৰ্য্য এবং জ্ঞানে পরিণত, এবং প্রতিবৃত্তির তদনুরূপ পরিণতিতে তিনি সৰ্ব্বলোকের সর্ববহিতে রত। তাই তিনি বলিয়াছেন— পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কতাম্। ধৰ্ম্মসংরক্ষণার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে । যিনি বাহুবলে তুষ্টের দমন করিয়াছেন, বুদ্ধিবলে ভারতবর্ষ একীভূত করিয়াছেন, জ্ঞানবলে অপূর্ব নিষ্কাম ধৰ্ম্মের প্রচার করিয়াছেন, আমি তাহাকে নমস্কার করি । যিনি কেবল প্রেমময় বলিয়া, নিষ্কাম হইয়। এই সকল মনুষ্যের দুষ্কর কাজ করিয়াছেন, যিনি বাহুবলে সৰ্ব্বজয়ী এবং পরের সাম্রাজ্য স্থাপনের কৰ্ত্ত হইয়াও আপনি সিংহাসনে আরোহণ করেন নাই, যিনি শিশুপালের শত অপরাধ ক্ষমা করিয়৷ ক্ষমাগুণ প্রচার করিয়া, তার পর কেবল দণ্ডপ্রণেতৃত্ব প্রযুক্তই তাহার দণ্ড করিয়াছিলেন, যিনি সেই বেদপ্রবল দেশে, বেদপ্রবল