পাতা:নকল রাণী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নকল রাণী।
১৯

হউক, যুবককে দেখিতে অতি সুন্দর, বলিষ্ঠ ও দৃঢ়কায়। অপরিচিত যুবক শঙ্করের নিকট আসিয়া বলিলেন, “শঙ্কর দাস, মেয়ে-মানুষের কথায় রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে মর কেন? যাহার জন্য না খেয়ে দেয়ে, সকাল হতে বেলা দ্বিপ্রহর পর্য্যন্ত এই প্রচণ্ড রৌদ্রে ঘুরিয়া বেড়াইতেছ, তাহার সন্ধান আমি বলিয়া দিতে পারি।”

 শঙ্করের এত বেলা পর্যন্ত খাওয়া হয় নাই, তার উপর পথশ্রম, পথশ্রম ব’লে পথশ্রম! বারাণসীর এমন গলি খুঁজি নাই—গুপ্তস্থান নাই বা প্রকাশ্য রাজপথ নাই, যেখানে তন্ন তন্ন না করিয়া শঙ্করদাস অমরচাঁদের জন্য খুঁজিয়াছে। সুতরাং এ সময় ভাল কথাটাও মন্দ লাগে, তার এই অপরিচিতের মেয়েমানুষ-সংযুক্ত ঠাট্টা বিদ্রুপের কথা শুনিয়া শঙ্করের মান্ধাতার আমলের পিত্ত পর্য্যন্ত চটিয়া উঠিল। শঙ্কর রোষভরে বলিয়া উঠিল,—“বেটা কি নিরেট, কেমন ক’রে ভদ্রলোকের সহিত কথা কহিতে হয়, জানে না। বিশ্বেশ্বরের এই সব বেওয়ারিস মালগুলোকে যদি দুই এক ঘা আক্কেল সেলামি দেওয়া যায়, তবে বেটারা ভদ্রলোকের সঙ্গে কেমন করিয়া কথা কহিতে হয়, শিখিতে পারে।”

 আমার সঙ্গী কহিলেন,—“আমি অভদ্র —না তুমি অভদ্র। তুমি টাকা খেয়ে একটি লোকের বহুমূল্য জীবন নাশ করিতে উদ্যত হইয়াছ, ইহাতে মূর্খ তুমি হইলে, না—হইলাম আমি। বাহাদুরি আছে তোমার বুদ্ধির! তোমার কাছ থেকে এ রকম বুদ্ধির দৌড় একটু ধার করে নিলে হয়?

 বীরবর শঙ্করের এ ব্যঙ্গোক্তি স্য হইল না। সে উঠিয়া “পাজি। যা মুখে আসে তাই বলিস্, জানিসনে আমি কে?” এই বলিয়া যুবকের মাথায় সজোরে এক চপেটাঘাত করিল।