পাতা:নটীর পূজা - প্রচার পুস্তিকা (১৯৩২).pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রবীন্দ্র-জয়ন্তী অভিনন্দনে

কবির প্রতিভাষণ


 আজ সত্তর বছর বয়সে সাধারণের কাছে আমার পরিচয় একটা পরিণামে এসেচে। তাই আশা করি যাঁরা আমারে জানবাক কিছুমাত্র চেষ্টা করেচেন এতদিনে অন্ততঃ তাঁরা একথা জেনেচেন যে, আমি জীর্ণ জগতে জন্মগ্রহণ করিনি, আমি চোখ মেলে যা দেখলুম চোখ আমার কখনো তাতে ক্লান্ত হোলো না, বিস্ময়ের অন্ত পাই নি। চরাচরকে বেস্টন ক’রে অনাদিকালের যে অনাহতবাণী অনন্তকালের অভিমুখে ধ্বনিত তাকে আমার মনপ্রাণ সাড়া দিয়েচে, মনে হয়েচে যুগে যুগে এই বিশ্ববাণী শুনে এলুম। সৌরমণ্ডলীর প্রান্তে এই আমাদের ছোট শ্যামলা পৃথিবীকে ঋতুর আকাশ-দূতগুলি বিচিত্র-রসের বর্ণ-সজ্জায় দিয়ে যায়, এই আদরের অনুষ্ঠানে আমার হৃদয়েক অভিষেকবারি নিয়ে যোগ দিতে কোনোদিন আলস্য করিনি। প্রতিদিন উষাকালে অন্ধকার রাত্রির প্রান্তে স্তব্ধ হ’য়ে দাঁড়িয়েচি এই কথাদি উপলব্ধি কর্বার জন্যে যে, যত্তে রূপং কল্যাণতমং তত্তে পশ্যামি। আমি সেই বিরাট সত্তাকে আমার অনুভবে স্পর্শ ক’রতে চেয়েচি যিনি সকল সত্তার আত্মীয় সম্বন্ধের ঐক্যতত্ত্ব, যাঁর খুশিতেই নিরন্তর অসংখ্যরূপের প্রকাশে বিচিত্রভাবে আমার খুসি হ’সে উঠ্‌চে—ব’লে উঠ্‌চে কোহ্যেবান্যাং কঃ প্রাণ্যাৎ যদেব আকাশ আনন্দে ন স্যাৎ; যাতে কোনো প্রয়োজন নেই তাও আনন্দের টানে টানবে, এই অত্যাশ্চর্য ব্যাপারের চরম অর্থ যাঁর মধ্যে; যিনি অন্তরে অন্তরে মানুষকে পরিপূর্ণ ক’রে বিদ্যমান ব’লেই প্রাণপণ কঠোর আত্মত্যাগকে আমরা আত্মঘাতী পাগলের পাগ্লামি ব’লে হেসে উঠলুম না।