পাতা:নন্দনে নরক - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ পরিচ্ছেদ >>> কর্ণেলিয়া বলিল, “ঠাট্ট নয়, তোমার প্রশংসার লোতে আমি একথা জিজ্ঞাসা করি নাই। আমার ছবিখানি এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই ; তুমি বলিয়াছিলে, ছবি শেষ করিবার পূৰ্ব্বে আমার আর একবার বসিবার দরকার ; সেই জন্য আমার জানিবার ইচ্ছা হইয়াছে, আমাকে নিরুৎসাহ বা বিমর্ষ দেখাইতেছে কিনা ?” সত্যই কর্ণেলিয়া বড় সুন্দরী ; কিন্তু তাহার সৌন্দর্য্যে লালসার ভাব বিজড়িত ছিল না। নববসন্তে কুসুমকুন্তলা বনলতা যেরূপ শোভা ধারণ করে, বর্ষায় কুল-প্লাবিনী তরঙ্গিণীর তরঙ্গ-ভঙ্গে যে সৌন্দর্য্য রাশি উছলিয়া উঠে, শুভ্র জ্যোৎস্না-পুলকিত যামিনীতে সুনীল সরোবরের নিৰ্ম্মল বক্ষে প্রস্ফুটিত কুমুদিনীর সুকোমল দলে যে সৌন্দর্ঘ্যের বিকাশ দেখিয়া ভাবুকের হৃদয় বিমোহিত হয়, উষার অরুণরাগে যে সৌন্দর্য্য সন্দর্শনের আশায় তামসী নিশার অবসানে জীব-জগৎ প্রফুল্ল মনে নয়ন উন্মীলন করে,—কর্ণেলিয়ার মুখের দিকে চাহিলে দর্শকের মনে সেইরূপ সৌন্দৰ্য্যানুভূতির সঞ্চার হইত। পাঠক এই উপন্যাসের প্রারম্ভ ভাগে আর একটি অতুলনীয় সুন্দরীর পরিচয় পাইয়াছেন । এমিলিও সুন্দরী । কিন্তু সে সৌন্দৰ্য্য যেন ভোগ ও বিলাসের পঙ্কিলতায় সমাচ্ছন্ন। কর্ণেলিয়ার রূপ বিশ্বরূপের স্বষ্টি-মাধুৰ্য্য প্রকাশ করিত, আর এমিলির রূপ ভোগাভিলাষীকে শৃঙ্গলের ন্যায় পৃথিবীর দিকে টানিয়া রাথিত । কর্ণেলিয়ার রূপে চক্ষু শীতল হইত, এমিলির রূপে চক্ষু ঝলসিয়া যাইত । এমিলির চক্ষে যে তীব্র মাদকতা ছিল, তাহ। মানুষকে উন্মত্ত করিতে পারিত ; কিন্তু কর্ণেলিয়ার চক্ষে সরলতা, পবিত্রতা ও নারী হৃদয়ের কোমলতা প্রতিবিম্বিত হুইত ।