পাতা:নন্দনে নরক - দীনেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 e নন্দনে নরক, তিনি তাহার শ্রবণযুগলকে বিশ্বাস করিতে পারিলেন না ; এই কি এলিজা ? সেই সুশীল, নম্র স্বভাব, নিরভিমানিনী মধুরন্থদয়া, মূৰ্ত্তিমতী ধৈর্য্য স্বরূপিণী এলিজার মুখে এ কি কথা ! বায়রামজি বাহ্যজ্ঞান শূন্য হইয়া, এলিজার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন ; সেই ঘন ঘোর বর্ষার নিশীথ রাত্রে, সেই উজ্জ্বল দীপালোকিত কক্ষে তিনি মন্ত্ৰমুগ্ধবৎ নির্নিমেষ দৃষ্টিতে এলিজার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন ; এলিজার রূপ যেন শতগুণ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল, তাহার বিস্ফারিত নয়নদ্বয় সান্ধ্য তারকার ন্যায় জল্‌ জল্‌ করিয়া উঠিল, তাহার নিবিড় কৃষ্ণ কেশপাশ তাহার কণ্ঠ গ্রীব ও উভয় বাহুমূলের পাশ দিয়া যেন শত কাল নাগিনীর ন্যায় অধোমুখে চঞ্চল হইয়া উঠিল ; তাহার স্থগৌর, সুন্দর, অশ্রুসিক্ত মুখখানি যেন পার্থিব শোক দুঃখের আবরণ বিদীর্ণ করিয়া, কোনও অপার্থির রাজ্যের আলোকে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল । বায়রামজি বুঝিলেন, ইহাই রমণীর প্রেম ! যে নারী তাহার প্রিয়তমকে এমন অন্তরের সহিত ভাল বাসিতে পারিয়াছে, তাহার মৃত্যুভয় নাই, আত্মবিসর্জনে সে অকুষ্ঠিত ; কিন্তু এলিজার এই প্রেম তিনি লাভ করিতে পারেন নাই, আমিনার হৃদয়েও সে প্রেম নাই। তবে আর সংসারে তাহার সুখ কি ? কেন তিনি নর-রক্তপাতে হস্ত কলুষিত করিলেন ? অনেকক্ষণ চিস্ত করিয়া বায়রামজি স্থির করিলেন, যদি অতীত স্মৃতি মুছিবার হয়, তাহা হইলে তিনি তাহা সবলে মুছিয়া ফেলিয়া, এই সুন্দরী, এই মনোমোহিনী, এই প্রকৃত প্রেমিকাকে লইয়াই সংসারে সুখী হইবার চেষ্টা করিবেন ; আমিন অধঃপাতে যাউক !—বায়রামজি