নববিধান 8 স্বামীর মুখের উপর হইতে উষা দৃষ্টি সরাইয়া লইয়া ধীরে ধীরে কহিল, সত্যিই আর কিছু হবার নয়, আমি অনেক ভেবে দেখেচি । শৈলেশ নিশ্চয় বুঝিল ইহা সোমেনের কথা। সহস্তে কহিল, ভূমিকা তা হ’ল, এখন স্থির কি করেচ বল ত ? আমি শপথ করে বলতে পারি তোমাকে কখনো অন্যথা করতে অনুরোধ করব না । উষা মিনিটখানেক চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তারপরে বলিল, দাদার সংসারে আমার ত চলে যাচ্ছিল-বিশেষ কোন কষ্ট ছিল না । কাল আবার আমি তাদের কাছেই যাবো । র্তাদের কাছে যাবে ? কবে ফিরবে ? উষা বলিল, তুমি আমাকে ক্ষমা ক'রো, ফিরতে আর আমি পারব না । আমি অনেক চিন্তা কবে দেখেছি, এখানে আমার থাকা চলবে না । এই আমার শেষ সিদ্ধান্ত । কথা শুনিয়া শৈলেশ একেবাবে যেন পাথর হইয়া গেল । বুকের মধ্যে তাহার সমস্ত চিন্তা যেন নিরন্তব মুগুর মারিয়া মারিয়া কহিতে লাগিল, যে লৌহ-কবাট করুদ্ধ হইয়া গেল, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবার সাধ্য এ দুনিয়ায় কাহারও নাই । সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া শৈলেশের প্রথমেই মনে হইল, সারারাত্রি ধরিয়া সে ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছে। জামালা দিয়া উকি মারিয়া দেখিল উষা নিত্য-নিয়মিত গৃহকৰ্ম্মে ব্যাপুতা-সোমেন সঙ্গে, বােধ হয় সে খাবার তাগাদায় আছে-সিঁড়িতে নামিবার পথে দেখা হইলে উষা মুখ তুলিয়া কহিল, তোমার চা তৈরি করে ফেলেচে, মুখ-হাত ধুতে দেবী করলে সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে কিন্তু। একটু তাড়াতাড়ি নিয়ো । শৈলেশ কহিল, বেশ ত, তুমি পাঠিয়ে দাও গে, আমার একমিনিটও দেরী হবে না। -এই বলিয়া সে যেন লাফাইতে লাফাইতে গিয়া তাহার বাথ-রুমে প্ৰবেশ করিল। মনে মনে কহিল, আচ্ছা!
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।