পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS নববিধান ইডিয়াটু আমি। দাম্পত্য-কলহের যুদ্ধ-ঘোষণাকে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা জ্ঞান করিয়া রাত্রিটা যে অশান্তি ও দুশ্চিন্তায় কাটিয়াছে, সকালবেলায় এই কথা মনে করিয়া শুধু তাহার হাসি পাইল তাই নয়, নিজের কাছে লজ্জা বোধ হইল। সংসার করিতে একটা মতভেদ বা দুটাে কথা-কাটাকাটি হইলেই স্ত্রী যদি স্বামি গৃহ ছাড়িয়া দাদার ঘরে গিয়া আশ্ৰয় লাইত, দুনিয়ায় তা তাহা হইলে মানুষ বলিয়া আর কোন জীবই থাকিত না । সোমেনের মা হইলেও বা দু’-দশদিনের জন্য ভয় ছিল, কিন্তু উষা নিছক হিন্দু-আদর্শে গড়া শ্ৰী-ধৰ্ম্ম ও স্বামী ভিন্ন সংসারে আর যাহার কোন চিন্তা নাই, সে যদি তাহার একটা রাগের কথাতেই তাহার আজন্মের শিক্ষা ও সংস্কারকে ছাড়াইয়া যাইতে দেয়, তাহা হইলে সংসারে আর বাকী থাকে কি ? . এবং এ-লইয়া ব্যস্ত হওয়ার বেশি পাগলামিই বা কি আছে, ইহাই অসংশয়ে উপলব্ধি করিয়া তাহার ভয় ও ভাবনা মুছিয়া গিয়া হৃদয় শান্তি ও শ্ৰীতির রসে ভরিয়া উঠিল। এবং ঠিক ইচ্ছা না করিয়াও সে উষার সঙ্গে বিভার ও তাহদের শিক্ষিত-সমাজের আরও দুইচারিজন মহিলার সঙ্গে মনে মনে তুলনা করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, থাক বাবা, আর কােজ নেই, আমার নিজের মেয়ে যদি কখনও হয়, ত সে যেন তার মায়ের মতই হয়। এমনিধারা শিক্ষা-দীক্ষা পেলেই আমি ভগবানকে ধন্যবাদ দেবো। -এই বলিয়া সে তাড়াতাড়ি কাজ সারিয়া মিনিট পাঁচ-ছায়ের মধ্যেই তাহার পড়িবার ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইল । নব-নিযুক্ত মুসলমান খানসামা চা, রুটি, মাখন, কেক প্ৰভৃতি প্ৰান্তরাশের আয়োজন লইয়া হাজির হইতে তাহার হঠাৎ যেন চমক লাগিল। এইসকল বস্তুতেই সে চিরদিন অভ্যস্ত, মাঝে কেবল দিনকয়েক বাধা পড়িয়াছিল মাত্র। কিন্তু টেবিলে রাখিয়া দিয়া বেহার চলিয়া গেলে এই জিনিষগুলির পানে চাহিয়াই আজ তাহার অরুচি বোধ হইল। উষা গৃহে আসিয়া পৰ্যন্ত এই সকলের পরিবর্তে