পাতা:নবীনচন্দ্রের গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭১৬ নবীনচন্দ্রের গ্রন্থাবলী। ন -তিনি উলঙ্গ ; পত্নীপুত্রহরা ; আজ্ঞাত স্থানে নিপতিত ও শীতে কম্পিত স্বল্পই বা হইবে কেন । তিনি কাদিতে লাগিলেন এবং মনে মনে বলিতে লাগিলেন,—“হায় মা ! তোহ্ এ কি বিচিত্র পটপরিবর্তন। সেই ঘূর্ণাবতার পর এই শান্তি! ঘোর অট্টহাঁসির পর এই মূহ হালি। সেই ধেয় উল্লম্ফনের পর এই নিশ্চল ভাৰ ! সেই স্বাক্ট-সংহারিণী মূৰ্ত্তির পর এই মোহিনী রূপ ! হায় মা ! তুই আমার সেই পতিপ্রাণা পত্নী এবং পিতৃপ্রাণপ্রতিম শিশু পুত্রটিকে গ্রাল করিয়া তোর মোহিনী শোভা দেখিবার জন্ত কি হতভাগ্য আমাকে জীবিত রাখিলি ৷” তিনি এবার উচ্চৈঃস্বরে প্রাণ খুলিয়া কাদিতে লাগিলেন । বহুক্ষণ এরূপ কঁদিলেন, এবং বহুক্ষণ এরূপ ভাবিলেন । সেই রোদন, সেই চিন্তা, ষে কখনও এরূপ অবস্থায় পতিত হয় নাই, সে কেমন করিয়া বুঝিবে ? অনেকক্ষণ র্তাহার হৃদয়েও যেন ঘূর্ণবাত বহিল। অনেকক্ষণ রোদনের পর সেই বাতা বর্ষণ শেষ হইয়া হৃদয় কিছু শাস্তভাব ধারণ করিলে, তিনি ভাবিলেন, তিনি যেরূপ রক্ষা পাইয়াছেন, তাহার পত্নী ও পুত্র সহ সেই দুৰ্গতিহারিণী দুর্গারূপিণী ভানুমতীও ত রক্ষা পাইতে পারে। এই ক্ষীণ আশার সঞ্চারে হৃদয়ে ও দেহে ক্ষীণ শক্তিরও সঞ্চার হইল। তিনি চারি দিকে কতকগুলি চঞ্চল আলোক দেখিলেন । এ সকল কিসের আলোক ! এ কি কোনও রূপ ভৌতিক আলোক ? সিন্ধু-সৈকতে তরঙ্গাভিঘাতে লবণাম্বুকণারাশি বিক্ষিপ্ত হইয় যে আলোক উৎপন্ন করে, একি সেইরূপ কোনও আলোক এই ঘূর্ণঝটিকার পর সমুদ্র-গর্তে কিংবা সৈকতে ক্রীড়া করিয়া বেড়াইতেছে ? কিছুক্ষণ মনোনিবেশ পূৰ্ব্বক নিরীক্ষণ করিলে অনাথনাখের বোধ হইল, যেন আলোকের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ছায়৷ দেখা যাইতেছে। আরও কিছুক্ষণ দেখিলে তাহার নিশ্চয় বোধ