পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
নরওয়ে ভ্রমণ

আর সে বুঝিবা স্তুতিতে পরিতুষ্ট হইয়া শান্ত সমাহিতচিত্তে মাকে বুকে বহিয়া তীরে লইয়া চলিল।

 যতই অগ্রসর হইতে লাগিলাম ততই গৃহ পানে মন চঞ্চল হইয়া উঠিল। তখন ভুলিয়া গিয়াছিলাম, সেও যে পরবাস। অদ্যকার রাত্রি প্রভাতেই কুক্ কোম্পানীর মুরব্বিয়ান চুকিয়া যাইবে, তাহাতে সেই হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিবে কি আমরাই বাচিব সে বিচারক উপরওয়াল। এতদিন এক সঙ্গে বসবাস করিয়া সকলের সঙ্গে যে একটা আত্নীয়তা জন্মিয়া গিয়াছে, আবার বিস্তীর্ণ সংসারে বিচরণ করিতে গিয়া যে তাহা বিনষ্ট হইয়া যাইবে, সেত জানা কথা। তবু আমাদের ভিজা প্রাণে কেমন সহজেই সবেরি দাগ বসিয়া যায়, তা আবার কালের সব-পোঁছা-হাত নইলে পুঁছিয়া ফেলা শক্ত। কর্ম্মঠ কঠিন প্রাণের কথা অবশ্য আলাদা।

 এদিকে সম্প্রতি প্রেম-পরাত্ম‌ুখী প্রবীণরা প্রতীক্ষায় ছিলেন, কত কত নবীন প্রাণ এই সামুদ্রিক যাত্রায়, দুশ্চেদ্য প্রেমপাশে আবদ্ধ হইয়া ধরা পড়ে! আজ তাহা প্রত্যক্ষ কারবার দিন! শুনিলাম সে পাশ কাটিয়া বড় কেহ পলাইতে পারে নাই। আজকার আনন্দ উৎসবের আর অবধি নাই। মনঃকষ্ট শুধু এই মনসিজ বাণে মর্ম্মাহত জনের। এদের আর আখেরী চাওয়ারও বিরাম নাই, বিদায়ের বিধিরও অফুরান নাই। মন মানে ত চোখ ছাড়ে না, আবার চোখ ছাড়েত প্রাণ শোনে না গোছ। অদর্শনের ফলাফলে এরা সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ, করেই বা কি?

 এতাবৎকাল সর্ব্ববিধ ক্রীড়া কৌতুকে যাহারা সুদক্ষতার পরিচয় দিলেন তাহাদের মধ্যে অদ্য বহুবিধ পারিতোষিক বিতরিত হইবে। তজ্জন্য সান্ধ্যভোজনের অব্যবহিত পরেই দ্রব্যজাত সুসজ্জিত করা হইল। উহাতে বহু মূল্যের অলঙ্কারাদি হইতে দৈনন্দিন ব্যবহারোপযোগী সামান্য জিনিষ পর্যন্ত নির্ব্বাচিত হইয়াছে। সহসা দেখিয়া বোধ হইতেছিল যেন কোন বিবাহ উপলক্ষে যৌতুক সকল সন্নিবেশিত রহিয়াছে। এক ষোড়শী কুমারীর উপর বিতরণের ভার অর্পিত হইল। আমার ভ্রাতা তাসখেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিলেন, সুতরাং তিনি যখন এই পরিণত বয়সে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ন্যায় তাহার প্রাপ্য পারিতোষিক গ্রহণ করিতে সেই সুদর্শনার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন তখন হাস্য সম্বরণ করে কার সাধ্য? পারিতোষিক বিতরণান্তে বাগ্মীদিগের বাক্যবিন্যাস কিছুক্ষণ চলিল। বলিতে কি? তৎশ্রবণে মনোনিবেশ করিতে গিয়া নিদ্রা দেবীর আরাধনার পক্ষপাতী হইয়া পড়িলাম।