পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ

 চিত্ত যখন প্রেমের আবেশে বড় চঞ্চল, অপেক্ষার উৎকণ্ঠা তখন ভারি অসহ্য হইয়া উঠে; তাই প্রিয় সমাগম বুঝি ভাগ্যে আর ঘটে না ভাবিয়া ভীতা সন্ধ্যা কিছু মিয়মাণ হইয়া পড়িল, দেখিয়া অংশুমালীর চিত্ত বিভ্রম ঘটিল! তিনি আর আপনাকে লুক্কায়িত রাখিতে পারলেন না। অসময়ে আসিয়া যেই দেখা দিলেন অমনই মানময়ীও দুর্জ্জয় মানের দায়ে একেবারে অদৃশ্য হইয়া পড়িলেন! তখন কবির উক্তি মনে পড়িল;—

“অনুরাগবতী সন্ধ্যা দিবসন্তহপুরঃসরঃ।
অহো দৈবগতিশ্চিত্রা তথাপি ন সমাগমঃ॥”

 তাই ত! অনন্তকাল ধরিয়া একি লুকোচুরী চলিয়াছে! বিধির একি বিধান! কেন এ অবিচার, কে বুঝিবে?

 তার পরের দিনের ব্যাপার আরও চমৎকার! আমরা যখন সূর্য্য আর সন্ধ্যা লইয়া বড়ই ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িতেছি, তখন প্রকৃতি দেবী তাঁর আর এক ইন্দ্রজাল বিস্তার করিতে আরম্ভ করলেন। ছিলাম আমরা অপার অতল জলে ভাসমান। এ আবার কোন মায়াপুরীতে আসিয়া সহসা উপস্থিত হইলাম। এ যে সাগরও নয় সরিৎও নয়, হ্রদ ও নয়, দীধিকাও নয়। নরওয়ের যে Fjordsএর কথা শুনিয়াছিলাম, এ বুঝি তবে তাই। সহযাত্রিগণ প্রায় সকলেই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এই অদৃষ্টপূর্ব্ব শোভা নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। ফিয়ড্‌এর দুই পাশে উচ্চ পর্ব্বতশ্রেণী কালের অপরিমেয়তা প্রমাণের নিমিত্তই যেন স্থির ভাবে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। এই পর্ব্বতসমূহের আবার বিশেষত্ব এই যে, ইহারা বৃক্ষলতাদিতে সমাচ্ছন্ন নয়। ইহারা কেবলই পাষাণে গঠিত, অথচ যেন আপনাদিগের বিশালতার গৌরবেই গৌরবান্বিত হইয়া মস্তক উন্নত করিয়া আছে। কোথাও আবার এ পাষাণ-দেহ ভেদ করিয়া তরতরবাহিনী নির্ঝরিণী বহিয়া যাইতেছে। হিমাচলের বক্ষঃস্থলে দাঁড়াইয়া এ শোভা অনেকেই দেখিয়াছেন, কিংবা বড় বড় হ্রদে ছোট ছোট জাহাজে চড়িয়া অনেকে এই সকল পর্ব্বতীয় দৃশ্য দুই এক ঘণ্টা কাল উপভোগ করিয়া থাকিবেন। কিন্তু জলপথে হাজার দেড় হাজার আরোহী লইয়া একখানা প্রকাণ্ড জাহাজ আর কোন পার্ব্বত্য প্রদেশের মধ্য দিয়া যাতায়াত করিতে বোধ হয় পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না।

 এই ফিয়ড্‌গুলি যত গভীর তত প্রশস্ত নয়। এই জন্য বিচক্ষণ নাবিকের সাহায্য ব্যতীত এ স্থলে চলাচল সম্ভব নয়। এক এক স্থান এত সংঙ্কীর্ণ যে, দূর হইতে মনে হয় বুঝিবা আর অগ্রসর হওয়া যাইবে না। প্রতিমুহূর্তেই আশঙ্কা হইতেছিল, কখন