পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ

পরদার আড়ালে থাকিয়া আমাদের এই বিড়ম্বনা দেখিয়া যেন আর হাস্য সংবরণ করিতে পারিতেছেন না। আমরা বিদেশী লোক। হেথাকার লীলাখেলা কি বুঝিব, ঘুম ভাঙ্গিয়া রোদের মুখ দেখিলেই অনুমান করিয়া লই যে, বেলা অনেক হইয়াছে। আজ ও ঘুমের ঘোরে কোন আলোর দেশে যে আসিয়াছি সেকথা একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিলাম। কাজেই চটপট উঠিয়া আমার ভ্রাতুস্পুত্রীকে ডাকিয়া তুলিয়া দুইজনে স্নানাদি সমাপ্ত করিয়া প্রাতরাশের আশায় প্রস্তুত হইয়া ঘণ্টাধ্বনির অপেক্ষায় বসিয়া গল্প করিতে লাগিলাম। “কৈ কারো ত সাড়া-শব্দ পাওয়া যাইতেছে না!” এই ভাবিয়া পরিচারিকাকে ডাকিবার উদ্দেশ্যে দেয়ালের বৈদ্যুতিক ঘণ্টা বারংবার টিপিতে লাগিলাম। কোন ফল হইল না; তখন একটু বিরক্ত বোধ হইল। তাইত! ‘কালা আদমীকে’ বুঝি এরা ‘কেয়ারই’ করে না। আচ্ছা! বক্‌সিসের বেলা বোঝা পড়া আছে। এইরূপে সেই বেতনভোগী ভৃতের উপর অযথা বাক্যব্যয় করিয়া ধাঁ করিয়া ঘড়ী খুলিয়া দেখি, ওমা! কি হবে? তিনটাও যে বাজে নাই! তখন দুজন একচোট খুব হাসিলাম। তারপর করা কি? পরদা সরাইয়া দেখি আমাদের দেশের এক প্রহর বেলার মত রৌদ্রের তেজ! আর কি শোওয়া পোষায়? শুইলেও যে চোখ বোঝা দায়। তখন কঠোর তপস্যার ফলে নিদ্রাদেরী করুণা করিলেন, আমরাও সেদিনকার মত বাঁচিলাম। এবার একে বারে আহারের আহ্বানের সঙ্গে গাত্রত্থান করা গেল। ভোজনের আয়োজন করিতে করিতে আমাদিগের গত রাত্রের অথবা দিনের সমস্ত ব্যাপার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করিয়া আশে পাশের সকলকে হাস্যরসে কিঞ্চিৎ অভিভূত করিলাম।

 আহারান্তে সকলেই প্রথম সিঁড়ির উপরে দেয়ালে নোটিস্ পড়িবার জন্য ঝুঁকিয়া পড়িলেন। তাহাতে লেখা আছে “জাহাজ সম্প্রতি ট্রঞ্জম নামক স্থানে পৌঁছিবে, এবং যাহারা পারে নামিতে ইচ্ছা করেন, প্রস্তুত হউন।” জাহাজের গতি ক্রমেই শিথিল হইতে লাগিল এবং তাহাতেই অনুমান করা গেল যে আমাদের গন্তব্য স্থান নিকটবর্ত্তী হইয়াছে। বড় জাহাজ হইতে তীরে নামিবার জন্য টেনডার (অর্থাৎ ছোট ছোট ষ্টিম্ লঞ্চ) আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই থাকত। খেয়া পারের মত যাত্রীরা উহা দ্বারা পার হইত। জাহাজ ভিড়িবামাত্র আমরা তিনজনে প্রথম দলের সঙ্গেই নামিলাম, এবং ৩০।৪০ খানা লেণ্ডো গাড়ী আমাদের অপেক্ষায় আছে দেখিয়া তাহা হইতে নিজেদের নম্বরের গাড়ী খুঁজিয়া বাহির করিয়া তাহাতে উঠিয়া বসিলাম। ঘোড়াগুলি চড়াই