পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
নরওয়ে ভ্রমণ

সত্ত্বেও, অনেকের যেন বিশ্বাস জন্মে নাই —মনে কেমন একটু সন্দেহ থাকিয়া গিয়াছিল। কিন্তু ক্রমে যখন দেখিল যে, শীতে তাহারা যতই সঙ্কুচিত—কাতর—হইয়া পড়িতেছে, আমরা ততই—শীত-নিবারণের উপযোগী যথেষ্ট পরিচ্ছদ না থাকা সত্ত্বেও—সোজা— প্রফুল্ল হইয়া উঠিতেছি, তখন তাহারা, বিস্ময়-বিস্ফারিত নেত্রে ভাবগতিক লক্ষ্য করিয়া, আমাদিগের অচিরে স্বাস্থ্যহানি ঘটিবার আশঙ্কা করিতে লাগিল। বঙ্গরমণীদিগের উপযুক্ত শীতবস্ত্রের কোনও অভাব আমাদের ছিল না, কিন্তু শিরস্ত্রাণ লইয়াই যত গোলযোগ! অবগুণ্ঠনই আমাদের চিরাভ্যস্ত দেশাচারসম্মত সদা-সর্ব্বত্র-ব্যবহার্য্য শিরস্ত্রাণ; সুতরাং ইহা গুরুভার হইলে চলে না, তাই সবমত লঘুভার বস্ত্রই তদুদ্দেশ্যে আমরা ব্যবহার করি। ইহজীবনে সূক্ষ্ম-অবগুণ্ঠনাচ্ছাদিত, দুঃখ-দারিদ্র্য-সন্তপ্ত এই মস্তকে হিমরায়ু সেবন কেন—তুষারপ্রয়োগেও সময়ে সময়ে তৃপ্তিলাভ করি। শীতকালে— দুর্যোগের দিনে—যখন জলে কন্‌কনে বাতাস “কাণের ভিতর দিয়া মরমে পশিতে” থাকে, তখনই কেবল একটু কাতর হইয়া পড়ি। এক্ষেত্রেও আমরা সূক্ষ্ম-অবগুণ্ঠানাচ্ছাদনে মস্তক আবৃত করিয়াই গিয়াছিলাম।—এজন্য অপরজাতীয় সহযাত্রিগণ আমাদের জন্য নিয়ত বিশেষ উদ্বিগ্ন হইতেছিলেন। যাহা হউক, সহযাত্রীদিগের এত আশঙ্কা-উদ্বেগ সত্ত্বেও আমরা যে একদিনের তরেও অসুস্থ হই নাই, সেটা কেবল আমাদের প্রতি বিধাতার বিশেষ করুণার পরিচায়ক বলিতে হইবে।

 আহারকার্য্য সমাধা করিতে আমাদের প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগিল। কারণ, তাহাতে চর্ব্ব্য-চুষ্য-লেহ্য-পেয় সর্ব্ববিধ উপচারেরই আয়োজন ছিল। আহারের অব্যবহিত পরে এদেশেও পানের ব্যবস্থা আছে বটে —কিন্তু তাহা পান-পাত্র নহে পান-পাত্রে স্থিত তরল-পদার্থ; তাহা চর্ব্বণীয় নহে—পেয় বলিয়া আমাদের অস্পৃশ্য। পানের পরিবর্ত্তে আমরা যে সুগন্ধি মসলা ব্যবহার করি, তাহা বাহির করিতে দেখিয়া, কোন কোন বিম্বাধরা তাহার রসাস্বাদনলোভে সকৌতুহলে আমাদিগের নিকট কিঞ্চিৎ যাঞ্চা করিলেন। কিন্তু আসব-গর্ভ-গন্ধ মুখে কি আর এলাইচ-লবঙ্গাদি রোচে? কাজেই ভদ্রতার খাতিরে তাঁহারা সেগুলিকে সুস্বাদু বলিয়া স্বীকার করিলেও, অন্তরে যে তাঁহারা আমাদের রুচির বিশেষ প্রশংসা করিতেছিলেন,—সেরূপ মনে হইল না। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর, কি মনে করিয়া তাঁহারা সকলেই একবার বাহিরে গিয়া প্রকৃতির শোভানিরীক্ষণে প্রবৃত্ত হইলেন। কি আশ্চর্য্য!— সকল জাতিরই এ কি বিকট ভ্রান্তি সার্ব্বজনীন অভ্যাস-দোষ! কোনও সুশোভন দৃশ্য দেখিলেই, তাহাকে নশ্বর মানবহস্ত-