পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
১৫

নিষ্কৃতিলাভ করিয়া থাকে—দেখিয়া শুনিয়া প্রবীণার অন্তর্জ্বালায় অস্থির হইয়া ফিরেন! আমরা কএকজন আজ দর্শকদলভুক্ত, সুতরাং স্থিরচিত্তে এ সকল বিষয় সমালোচনা করা ভিন্ন আমাদের অন্য কোন কাজ ছিল না। আহারের ডাক পড়িতেই নির্দ্দিষ্টস্থানে বসিয়া বরতনুগণের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। এবার শ্বেত, লোহিত, হরিৎ, পীত বর্ণসমূহের সমুন্বয় দেখা দিল; মাঝে মাঝে অবাৱ, মসিবিনিন্দিত অসিতবর্ণ কোটের আম্‌দানী হইয়া, যেন শশাঙ্কের কলঙ্ককালিমা বিকশিত হইল। তখন ভাবিলাম, যা হউক। বাহ্যজগতে,এ —আলোর দেশে ত এতদিন এ সকল দৃশ্য দেখা ভাগ্যে ঘটে নই; তাই বুঝি সেই চতুর চিত্রকর, কিয়ৎ কালের নিমিত্ত অমাদিগের দৃষ্টির শ্রান্তি অপনোদনের জন্য, এরূপ একৗশল করিতেছেন!

 আহারান্তে ডেকে আসিয়া দেখি, প্রদীপ্ত দীপালোকে এবং কৃত্রিম পত্রপুষ্পে, উহা এক দিব্য নৃত্যশালায় পরিণত হইয়াছে। একপার্শ্বে জাহাজের বাদ্যকরগণ বাজাইবার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। নির্দ্দিষ্ট সময়ে ইঙ্গিত-মাত্র দলে দলে নর্ত্তক-নর্ত্তকীদিগের আবির্ভাব হইতে লাগিল। পাশ্চাত্যদেশের সকল প্রকার নৃত্যোৎসবেই যুগলরূপে নর্ত্তনের ব্যবস্থা। আমাদের দেশে, কেন জানি না, কিন্তু এবিধি কোনকালেই প্রচলিত ছিল না। আমাদের দেশের নৃত্যনৈপুণ্যে ললিতলবঙ্গলতাগণের অলক্তচরণ নিঃসৃত শ্রুতিমধুর নূপুরধ্বনি সংমিশ্রিত; আর এদেশের নৃত্য-চর্চ্চায়, যুগপৎ কোমল পদপল্লব এবং কঠিন চরণ-সংশ্লিষ্টপাদুকার কঠোর নিঃস্বনে কর্ণযুগল কিঞ্চিৎ প্রপীড়িত—তুলনায় সমালোচনায় মোটের উপর এই যা প্রভেদ! যুগযুগান্তর হইতে আমরা যুগলরূপের বৈচিত্র্যকে ধর্ম্মের ভিতর দিয়া দেখিয়া আসিতেছি, তাই এইভাবের যুগলরূপ দেখিলে আমাদের শীলতায় কেমন একটু আঘাত করে! হইতে পারে, ইহা আমাদের উচ্চশিক্ষার অভাবের ফল। ফলে, যে কারণেই হউক, বেশীক্ষণ বসিয়া এই কলাবিদ্যা-সম্ভূত অপার আনন্দ উপভোগ করিতে অসমর্থ হইয়া, ধীরে ধীরে স্বস্থানে প্রস্থানের ব্যবস্থা করিলাম। সেরাত্রে কতক্ষণ এ আমোদ-প্রমোদ চলিয়াছিল, বলিতে পারি না। শুনিতে পাই, এমন সকল ব্যাপারে নিশিভোর করিয়া দেওয়াই নিয়ম। তারপর, যামিনী-জাগরণ-হেতু শ্রান্ত দেহকে পরদিনান্ত পর্য্যন্ত শয্যায় শায়িত রাখায়ও কোন পরিবাদ নাই।