পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
নরওয়ে ভ্রমণ

সহজে ফুরায়? মনে আবার উদ্যম উৎসাহ আসিয়া জুটিল। সহসা সমতলভূমি পাইয়া অশ্বগণ শুভ্রতার মধ্য দিয়া সানন্দে ছুট্ ছিল। হঠাৎ যেমন মোড় ফিরিয়াছে, অমনি যেন চমক্ ভাঙ্গিল -আশ্চর্যে স্তম্ভিত হইয়া গেলাম! এ যে সত্য সত্যই দিব্যধাম মনে হইল—আমি কি জাগিয়া না ঘুমঘোরে আছি? চারিদিকে ফিরিয়া চাহিয়া দেখি, এমন সৌন্দর্য্য ত জীবনে আর দেখি নাই!—কবি গাহিয়াছেন—

“যার খুসি রুদ্ধ চোখে কর বসি ধ্যান,
বিশ্ব সত্য কি কিম্বা ফাঁকি লভ এই জ্ঞান।
আমি ততক্ষণ বসি তৃপ্তিহীন চোখে,
বিশ্বেরে দেখিয়া লই দিনের আলোকে।”

 আজ মহাকবির নির্দ্দিষ্ট পথই অনুসরণ করলাম। ভাবিলাম, ধ্যান-ধারণায় কি এমূর্তি এমন প্রকটিত হয়! ইচ্ছা হইতেছিল, যত প্রিয়জনকে অনিয়া একবার এ দৃশ্য দেখাই।—সৌন্দর্য্য একা উপভোগ করায় সার্থকতা নাই— এমন দৃশ্য একা দেখিয়া তৃপ্তি নাই। দূরত্ব-জ্ঞান তখন তিরোহিত— ব্যবধান তখন বিলুপ্ত;— স্মরণমাত্রই যেন সকলকে কাছে পাইলাম। কল্পনাবলে প্রিয়জন সনে যখন একই দিব্য-সৌন্দর্য্য উপভোগে বিভোর হইয়া আছি, এমন সময় গাড়ীগুলি এক বিচিত্র ভবনদ্বারে থামিয়া গেল! গাড়োয়ান আসিয়া হাত বাড়াইয়া দিয়া আমাদিগের অবতরণের সহায়তা করিতে আসিল! সভ্যদেশের—কি ধনী কি দরিদ্র, কি শিক্ষিত কি মূর্খ, সকলেই শিশুকাল হইতেই নারীজাতির সম্মান করিতে শিখে; কোথাও ইহার ব্যতিক্রম দেখি নাই। আমরা কিন্তু প্রথমতঃ একটু ইতস্ততঃ করিতে লাগিলাম সেটা অবশ্য পাশ্চাত্যদেশীয় রীতিনীতি না-জানা বশতঃ নয়—পথে আসিতে আসিতে যে হস্তে নিষিদ্ধ খাদ্য দ্রব্য হইতে আরম্ভ করিয়া, নানা অস্পৃশ্য দ্রব্য ধারণ করিতে স্বচক্ষে দেখিয়াছি, সহসা সেই হস্ত স্পর্শ করিতে মনে যেন কেমন একটু কুণ্ঠা বোধ হইল।——আর এমনটা হওয়া যে অস্বাভাবিক, তাহাও মনে হয় না।

 তারপর যখন দেখিলাম যে, পায়ের আর স্বেচ্ছায় উঠিবার কোন উদ্যোগই নাই, তখন অগত্যা শুধু সে দিনের নয়,অনেকদিনের আহার্য্যের চিহ্ন পরিলিপ্ত গাড়োয়ানের সেই রুক্ষ করের আশ্রয়ে, অবতরণ-কার্য্য সমাধা করা গেল। পরে সেই হস্তাধিকারীকে, শিষ্টাচারের অনুরোধে, ধন্যবাদ দিয়া সঙ্গিগণসহ সম্মুখস্থিত ভবনে প্রবেশ করিলাম।