পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
নরওয়ে ভ্রমণ

শুভ কামনায়, নীরব নিশ্চল থাকিয়া, তাহার যাত্রায় অনুমতি দিলেন। এ যাওয়া যে সে যাওয়া নয়। একেবারে জন্মের মত জন্মস্থান হইতে বিদায়, আর প্রত্যাবর্ত্তন নাই। তবে অন্তরের যোগ? সে ত থাকিবে। এ যোগাযোগ ভিন্ন এই সরল কোমল প্রাণে এত বল যোগাইবে কে? মায়ের নাড়ী ছাড়িয়া সন্তানের পুষ্টি কোথায়? ক্ষুন্ন মনে ক্ষণ প্রাণ লইয়া সে বালিকা বিদায় হইল। সঙ্গে স্বজনগণ প্রহরী চলিল। ক্রমে যখন সে রাজ্যের সীমা অতিক্রম করিবার উপক্রম করিল, তখন পর্ব্বতরাজ দুহিতার পিত্রালয় পরিত্যাগের বা শ্রবণে কৌতুহলী হইয়া, কত কত তরুণী গিরি-তরঙ্গিণী তার সঙ্গ লইল দেখিয়া, শৈলস্বগণ সকলেই সসম্ভ্রমে সরিয়া পড়িলেন। কেন না অকারণ, কুল-কামিনীগণের পথ অনুসরণ, তাঁহারা শিষ্টাচারবিরুদ্ধ আচরণ বলিয়া জানিতেন। মাতা ধরিত্রীর হাতে ইহার সংরক্ষণের ভার রহিয়াছে জানিয়া, তাঁহারা আর কোন উদ্বেগ অনুভব করলেন না। এই যে অজানা, অচেনা পথ দিয়া সে চলিয়াছে, কিছুতেই তার ভয় নাই—ভ্রূক্ষেপ নাই। মুখে কেবল—“সর সর—পথ দাও” “আমায় কেহ বাধা দিতে আসিও না, কেহ আমায় বাঁধিয়া রাখিতে পারিবে না”।এখন আর তার ক্ষীণ দেহ ক্ষুদ্র প্রাণ নাই। প্রেম তাহাকে ক্রমেই ফুটাইয়া তুলিতেছে, তার শক্তি বাড়াইয়া দিতেছে। তাহার এই উদ্দাম রূপযৌবনে বিমুগ্ধ হইয়া, কোথাও বৃষস্কন্ধ কোন উপলখণ্ড, বুক পাতিয়া তাহার পথরোধের চেষ্টা করিতেছে, দেখিয়া, গরবিণী অমনই পাশ কাটাইয়া, তাহার আশার বাসায় বালি ছড়াইয়া দিয়া, অট্টহাসি হাসিয়া চলিয়াছে। কোথাও আবার কোন সাহসী সেতুবন্ধে এ যাত্রার বিঘ্ন ঘটাইবার নিমিত্ত দৃঢ়পদে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। জানে না যে, প্রেমময়ী, সর্ব্ববিঘ্নবিনাশন সেই প্রেম-মহাজনের আশ্রয়ে আসিয়াছে। কিন্তু এবারে অনুনয় বিনয়, এখানে গরবের কাজ নয়, “নম্র হৃদয়ে নয়নেরি জলে” লতার মত বেড়িয়া বেড়িয়া চরণ চুমিয়া ভিক্ষা চাহিতে হইবে, তবেই পথ পাওয়া যাইবে। “শরণাগত জন ক্ষুদ্র হইলেও উচ্চাশয় ব্যক্তি তাহাকে কখনও বিমুখ করেন না” এই মহাবচন শৈলজার স্মরণে ছিল। এবারে দ্রুতপদসঞ্চালন। বাধায় বাধায় সব গতিরই নাকি বেগ বাড়ায়, তারপর আরও আনন্দে মাতায়। এবারে উচ্ছ্বসিত প্রাণ কূল ছাপাইয়া উঠিতেছে, তখন তীরভূমিও আহ্লাদে আটখানা হইয়া ইহারই গায়ে ঢলিয়া পড়িতেছে। আবার আগুয়ান। পথে পতি-দর্শনে পরাঙ্মুখী কএকটি দুর্ব্বলা গিরিবালা, তাহাদের বিরহকাতর শীর্ণদেহকে ভূগর্ভে বিলীন করিতে যাইতেছে দেখিয়া, উদারচেতা এই রাজসুতা, উহাদিগের প্রিয় সম্মিলন ঘটাইবেন