পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
নরওয়ে ভ্রমণ

 এমন জায়গায়, গাইড মহাশয়ের বেশী পাণ্ডিত্য দেখাইবার উপায় নাই। কেন না প্রকৃতি দেরবীর, এত সব কারিগরির, সন তারিখ তার বড় জানা নাই। সুতরাং দৃশ্য বস্তুর বিষয়ে নূতন কিই বা বলিবেন। তিনিও দুই চোখে যা দেখিতেছেন, আমাদেরও তেমনি দুটী চক্ষু আছে। আজ বেচারা যেন একটু কাবু হইয়া, কেবল ভাবিতেছে যে কখন বা এই অকৃত্রিমের মধ্যে কিছু কৃত্রিমের দেখা পাইবে, তখন তার কণ্ঠস্থ ঐতিহাসিক বিদ্যাটা একবার আমাদের কর্ণগোচর করাইয়া, প্রকৃতি দেবীর নিকট, বাধ্য হইয়া এই বেকুবী স্বীকারের প্রতিশোধ লইবে। এমন সময় বিঘ্নবিনাশন বিধি তার প্রতিবিধান করিলেন, দুর হইতে এক অট্টালিকার কিয়দংশ দেখা গেল; অমনই সেই বাগ্মীর বশীকৃত রসনা, এতক্ষণেরর পুঞ্জীকৃত বাণী যেন একবারে উদগীরণ করিবার উপক্রম করিল। প্রথমে আমরা এই বাক্যস্রোতের উদ্ভব নির্দেশ করিতে সমর্থ হই নাই। কারণ বক্র পথের আদ্রিরাজি মুহূর্তের জন্য সে অট্টালিকা অন্তরাল করিয়া রাখিয়াছিলেন। আমরা ভাবিলাম 'লোকটা বকে কি?' খানিক পরে চাহিয়া দেখি যে সে বাতুল নয়, সম্মুখে বাড়ীই বটে। দেখিতে দেখিতে সে হর্ম্ম-সমীপে আসিয়া উপনীত হইলাম। আগেই বলিয়াছি যে, ইংরাজ জাতির, পরিপাটীরূপে আহার কার্য্য নির্ব্বাহ করিবার স্থানের অসার কোথাও হইতে পারে না। ইহা ভোজনপ্রিয়তার পরিচায়ক, কি কার্যকুশলতার নিদর্শক? তা যে যাই মনে করুক, পর্যটকের পক্ষে এ অবস্থা যে সুবিধাজনক, সে তো স্বীকার করিতেই হইবে। আমাদের গন্তব্য স্থানের এইটিই বিশ্রাম স্থল। এখান হইতে কেহ কেহ অগ্রসর হইবার পক্ষে, কেহ বা পুনরায় অর্ণবপোতে প্রত্যাবর্তনেচ্ছু হইলেন। আমরা প্রথম দলে রহিলাম। এখানকার আহারবিধি যে সুচারুরূপে সম্পন্ন হইল, ইহা বলা বাহুল্য। বাহিরে আসিয়া দেখি, নানাবিধ নৃত্যগীতবাদ্যের চর্চা চলিতেছে। ভ্রমণকারীদের চিত্তবিনোদনর্থ আসেপাশের গরীবদুঃখী মিলিয়া এ ব্যবস্থা করিয়াছে। মেণ্ডেলীন নামক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গান বড় মিষ্ট শুনাইতেছিল। সামান্য সাজগোজ, করা, কৃষকদুহিতার, যে তালে তালে তাহাদের কঠোর পদ-বিন্যাস করিতেছিল, তাও মন্দ লাগে নাই। বেহালা, ফ্লুট, ক্লেরিওনেট ইত্যাদি হরেক রকমের যন্ত্র হইতে শব্দ উত্থিত হইয়া কেমন একটা হট্টগোল বাধিয়া গিয়াছিল। কোনটা যে শুনিব, ভাবিয়া পাই না। অবশেষে যার যার পথে যাইবার সময় সমাগত হওয়ায়, এ আমোদ বন্ধ করিতে হইল। যার যাতে মনস্তুষ্টি হইয়াছিল সেই অনুসারে দক্ষিণা দিয়া, এই দীনদুঃখীদিগকে বিদায় করিল।