পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৪৩

 আমরা জাতে বাঙ্গালী, তাতে স্ত্রীলোক, বে-টাইম্ খাওয়া শোয়াই আমাদের অভ্যাস এসব বিষয়ে কড়াকড়ি বিধিব্যবস্থা সব সময় আমাদের ভাল লাগে না, পোষায়ও না। অথচ এদের কাছে নিজেদের দুর্ব্বলতা স্বীকার করিতে, কেমন আত্মগৌরবে আঘাত পড়িল, তাই বিশ্রামসুখে নিজেকে বঞ্চিত করিয়া, আহ্বানমত সকলের সঙ্গে আসিয়া বসিয়া পড়িলাম। এ হোটেলে প্রতিদিন অনেক বাহিরের লোক এ সময় আহার করিতে আসে। এত অজানা মুখ দেখিয়া কেমন একটা অশোয়াস্তি বোধ হইতে লাগিল। নরওইজীনদের কাছে যেন আমরা বিধাতার এক নূতন সৃষ্ট বস্তু হইয়া পড়িয়াছিলাম। তারা আমাদের যত দেখে, আঁখির পিপাসা যেন আর মিটে না। নজর দিলে কি আর প্রাণ বাঁচে? কাজেই অশোয়াস্তি। আহার শেষ হইতে না হইতেই চট্‌পট্ উঠিয়া ঘরে চলিয়া আসিলাম। বড়ই শ্রান্ত হইয়াছিলাম, শুইতেই ঘুমাইয়া পড়িলাম। কিন্তু নোটিসে যে লেখা ছিল, ৫টা ভোরে রেল ছাড়িবে, সেই তাড়ায় ভাল ঘুম হইতে দিল না। বালিশের নীচের ঘড়ী তোলা, দেখা এবং পুনঃ যথাস্থানে রাখা, এই কর্ম্মেতেই ঘুমের দফা রফা! পরিচারিকা আসিয়া জাগাইবার অনেক আগেই আমরা প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিলাম। শীতের দেশের সুখের শয্যা ছাড়িয়া, সকাল সকাল উঠা ত সোজা কথা নয়? তাতে মনের জোর চাই। তারপর, ভোর বলিতে, এদেশে সেই স্নিগ্ধ মনোহর ঊষার আলো নাই, যে দেখিয়া অসময়ে ঘুম ভাঙ্গার সকল কষ্ট দূর হইবে। তা যাক, দেশ দেখিতে আসিয়া যে কেবল নিছক সুখই পাব, এমন কি কথা——আর তা হবার যো নাই!—দুঃখ যে সুখের নিত্য ভাণ্ডারী। এই বলিয়া মনটাকে প্রবোধ দিয়া, যথাশক্তি অন্তরে বল-সঞ্চয় করিয়া গাড়ীতে গিয়া উঠিলাম। এ হোটেলের গায়েই রেল যাতায়াত করে, এই সুবিধার জন্যই এর এত খাতির।

 অজি ট্রেণ বেশী বেগে চলিতে পারিতেছে না। ক্রমাগত সুড়ঙ্গের পর সুড়ঙ্গ, (Tunnel) রাস্তা দুর্গম। ক্ষণে আলো ক্ষণে অন্ধকার, যেন এক বৈদ্যুতিক খেলা চলিতেছে। গাড়ীর ভিতরে মহা হাসির ধূম পড়িয়া গিয়াছে। কথা বলিতে বলিতে, আচম্বিতে একেবারে দেহের বিলোপ। যেন কোন ফোন্ (Phane) সহযোগে কলে কথা চলিতেছে। সতত পরোপকারী গাইড্ বেচারী অন্য গাড়ীতে ছিল, আমাদিগের কুশল জিজ্ঞাসার জন্য, ব্যস্ত সমস্ত হইয়া আমাদের দুয়ারে আসিয়া দাঁড়াইল। ইহাতে আমাদের ইচ্ছামত আরাম উপভোগের পক্ষে ব্যাঘাত ঘটিলেও, ভদ্রতার খাতিরে